বারকোড কি এবং বারকোড কিভাবে কাজ করে?
তেল, সাবান, শ্যাম্পু, , পাউডার, ম্যাগি, চিপস, বিস্কুট,গুঁড়া মসলা ইত্যাদির প্যাকেটে কালো সমান্তরাল রেখা অবশ্যই তো দেখেছেন । মূলত এই সমান্তরাল রেখা গুলোই হল সেই পণ্যটির বারকোড বলা হয়, যাতে সেই পণ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে । কিন্তু এই লাইনগুলোর মানে আসলে কি জানেন? না জানলেও চিন্তার কিছু নেই । কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা বারকোড কি ? এবং বারকোড কিভাবে কাজ করে ? এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ।
বারকোড কি। what is barcode in Bangla
আপনি যদি অনলাইন থেকে বা কোন দোকান থেকে কোন পণ্য কিনলে যেমন, পাউডার, সাবান তেল শ্যাম্পু সেই পণ্য বা প্রোডাক্ট এর উপর সাদা কালো লম্বা লম্বা দাড়ি দেখতে পান তো এগুলো হচ্ছে Barcode।
আপনি যদি এসব পণ্য বা প্রোডাক্ট এর গায়ে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে এই Barcode স্ক্যান করেন, এই স্ক্যান করা মাধ্যমে আপনি ওই প্রোডাক্ট বা পণ্য সম্পর্কে আপনি বিভিন্ন রকমের তথ্য বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে পারবেন।
যেমন ওই প্রোডাক্ট এর মূল্য কত ছিল, প্রোডাক্টটির ওজন কত ছিল এবং কবে তৈরি হয়েছিল বা ওই পণ্যটি কোন কোম্পানির তৈরি ইত্যাদি বিষয়।
বারকোড শব্দটি শুনলেই প্রথম যে ছবিটা মাথায় আসে তা হল, কিছু কালো এবং সাদা সমান্তরাল রেখা এবং সেই রেখাগুলোর নিচে লেখা কিছু এলোমেলো সংখ্যা । কিন্তু এটি আসলে কোন ছবি নয়, বরং এটি মূলত একটি জটিল কাঠামো যার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে রাখা হয় । আর এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র অপটিক্যাল স্ক্যানারের সাহায্যেই রিড করা যায় ।
আপনি যখন কোন মল বা শোরুমে যাবেন, তখন সেখানে দেখবেন যে, ক্যাশ কাউন্টারে বসে থাকা ব্যক্তি একটি ডিভাইসের সাহায্যে প্রোডাক্টগুলোর বারকোড স্ক্যান করে দেখেছেন । মূলত সেই ডিভাইসটি হল একটি অপটিক্যাল স্ক্যানার ।
যা একটি কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করা থাকে এবং যখন এটিকে বার কোডের উপরে ধরা হয় তখন এটি বারকোড স্ক্যান করে এবং বারকোডে থাকা তথ্য কম্পিউটারে পাঠায় । আর এভাবেই অপটিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে বারকোড রিড করা হয় ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, এই বারকোড কি এবং বারকোড কিভাবে কাজ করে? তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক –
বারকোড কাকে বলে। Barcode meaning in bengali
আপনি যদি কোন পণ্য বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে জানার জন্য প্রোডাক্ট বা পণ্যর গায়ে যে বারকোড দেওয়া আছে সেটা স্ক্যান এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন।
প্রোডাক্টটির দাম কত, প্রোডাক্টটি কবে তৈরি হয়েছিল ও সেই প্রোডাক্টটি কোন কোম্পানির ইত্যাদি সব তথ্য।
সেই প্রোডাক্ট এর উপর সমান্তরাল ভাবে যে সাদা কালো দাড়ি গুলো দেখতে পান তাকেই বারকোড বলে।
বারকোডের ইতিহাস কি?
Barcode আবিষ্কারের পূর্বে 1890 সালে পাঞ্চকার্ড (punch card) আবিষ্কার হয়। এ punch card এর সাহায্যে কোন প্রডাক্ট বা পণ্য কে ট্র্যাক করা খুব জটিল ছিল। এরপর যখন 1948 সালে Drexel University আলোচনা হয় যে পণ্য বা প্রোডাক্ট এর উপর কোন কোড লেখা থাকলে সেটাকে খুব সহজে ভালোভাবে ট্র্যাক যায়।
আর (Drexel University) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র Norman Joseph Woodland শোনেন এবং তার বন্ধু Bernard Silver bolenge কে বলেন। তারা দুজনে এটির সমাধান একসাথে ভালো ভাবে খুঁজতে থাকেন।
তারপর তারা দুজন Ultraviolet Ink ব্যবহার করে কোড লিখতে শুরু করে কিন্তু এ প্রসেসটি খুব তাদের কাছে ব্যয়বহুল ছিল। এইজন্য Norman Joseph Woodland (Barcode) আবিষ্কারের জন্য Morse code concept এর উপর গবেষণা এবং কাজ শুরু করে যা dot (.) এবং dash (-) দিয়ে তৈরি।
কিন্তু তাদের কাছে এটিও খুব বেশি জনপ্রিয় মনে হয়নি।
এরপর হঠাৎ Norman Joseph Woodland ভাবেন যে Morse code এ dot এবং dash এর বদলে পাতলা হালকা এবং লম্বা লাইন ব্যবহার করলে তাতে কোড লেখা আরও অনেক সুবিধা হবে।
এভাবেই তারা দুইজন বিজ্ঞানীর Barcode আবিষ্কার এর যাত্রা শুরু হয়। অর্থাৎ আপনাকে যে কোন সময় যদি অন্য কোন লোক আপনাকে প্রশ্ন করে বারকোড কে আবিষ্কার করেছিলেন এর সহজ উত্তর হল Norman Joseph Woodland এবং Bernard Silver bolenge ।
বারকোড লাইন এবং সংখ্যা
EAN-13 বারকোড সর্ব মোট ১৩ টি সংখ্যা নিয়ে গঠিত । আর এগুলো হয় ০-৯ সংখ্যা । যদি আমরা লাইনের কথা বলি, তাহলে এতে মোট ৯৩ টি লাইন থাকে । যার মধ্যে ৩+৩+৩ লাইন বারকোডের শুরুতে, মাঝখানে এবং একদম শেষে অবস্থিত ।
এই লাইনগুলো বাকি লাইনগুলোর চেয়ে একটু বেশী লম্বা । এর মাঝের ৩ লাইন বারকোডকে ২ ভাগে ভাগ করে। এই দুটি অংশে ৪২ টি ব্ল্যাক এবং ৪২ টি হোয়াইট লাইন রয়েছে যা ৭-৭ লাইনের ৬ টি ব্লকে বিভক্ত । এই 6টি ব্লক, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে । নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে –
উভয় অংশে সমান লাইন থাকলেও এগুলোর প্রস্থ ও ব্যবধান ভিন্ন । অর্থাৎ, একই সংখ্যার জন্য, উভয় অংশে বিভিন্ন প্রস্থ এবং স্থান সহ লাইন বা রেখা রয়েছে ।
উদাহরণস্বরূপ, বাম দিকের ব্লকগুলিতে জোড় সংখ্যায় সাদা লাইন রয়েছে এবং ডান দিকের ব্লকগুলিতে বিজোড় সংখ্যায় সাদা লাইন রয়েছে । যা এর স্থান প্রতিনিধিত্ব করে । এই স্থান থেকে বারকোড স্ক্যানার বুঝতে পারে যে, কোন দিক থেকে স্ক্যান করতে হবে?
বারকোড স্ক্যানিং সাইড
সাদা রেখার প্রথমটিতে যদি জোড় সংখ্যা থাকে তাহলে বারকোড স্ক্যানার বাম সাইড থেকে ডানে স্ক্যান করে ।
আবার যেখানে বিজোড় সংখ্যক সাদা রেখা থাকে, সেখানে স্ক্যানার ডান থেকে বামে স্ক্যান করে । এভাবে বারকোড উল্টে গেলেও বারকোড স্ক্যানার খুব সহজেই বারকোড স্ক্যান করতে পারে । এর জন্য এটি একটি বিশেষ ধরনের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ।
বারকোড কত প্রকার?
বারকোড দুই প্রকার যথাঃ
- একমাত্রিক বা 1D বারকোড এবং
- দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড
একমাত্রিক বা 1D বারকোড কি ?
একমাত্রিক বা 1D বারকোড গুলো শুধুমাত্র স্পেস বা লাইন দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাক । এই কোড গুলোতে পণ্যের রং, পণ্যের ধরণ ও আকার সম্পর্কে ধারণা জমা থাকে। তাছাড়া এধরনের কোড গুলো আমরা সাধারণত দেখে থাকি প্রোডাক্ট প্যাকেজিং কিংবা ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোডে।
যার মাধ্যমে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং সহজে ট্র্যাগ করা যায়। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি গুলো এই ধরনের বারকোড গুলো ব্যবহার করে থাকে। একমাত্রিক কিংবা 1D বারকোড গুলো যে সকল পণ্য গুলোর গায়ে দেখা যায়, সেগুলো হল যেমনঃ তেল, ক্রিম, কলম ইত্যাদি।
দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড কি ?
দ্বিমাত্রিক বা 2D বারকোড গুলো একমাত্রিক বারকোড থেকে একটু বেশি জটিল হয়ে থাকে। এই কোড গুলোতে পণ্যের ছবি, মূল্য সহ আরও বিভিন্ন তথ্য জমা থাকে। আর এই ধরনের বারকোড গুলোকে QR কোড বা কুইক রেসপন্স কোড নামে পরিচিত।
কিভাবে বারকোড চেক করবেন ?
টেকনোলজি উন্নত হওয়ার কারণে এখন বর্তমান সময়ে barcode চেক করার অনেক উপায় রয়েছে, যেমন আপনারা barcode রিডার দিয়ে খুব সহজে barcode চেক করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনার হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন দিয়ে আপনি খুব সহজেই স্ক্যান করে বারকোড চেক করতে পারবেন।
barcode চেক করার জন্য বর্তমান সময়ে অনেক অ্যাপ্লিকেশন আপনারা গুগোল প্লে স্টোরে বা অ্যাপ স্টোরে পেয়ে যাবেন যেগুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে barcode চেক করতে পারবেন।
barcode কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় বা barcode এর ব্যবহার কী আশা করি আপনি এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
এ ছাড়া আপনার আরও একটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে সেটা হচ্ছেঃ barcode কত ডিজিটের হয় এই প্রশ্নের উত্তর হবে barcode সাধারণত 12 ডিজিটের হয়।
আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারলেন barcode মানে কি, barcode স্ক্যানার অনলাইন ও বারকোড কোথায় দেখা যায় এ বিষয়গুলি ভালোভাবে বুঝতে পারলেন।
barcode বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো অবশ্যই আপনি নিচে কমেন্ট বক্স এ কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
শেষ কথা
আমরা আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা বারকোড সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক তথ্য জানতে পেড়েছেন । আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন