30 হাজার টাকার বেস্ট বাজেট গেমিং পিসি বানিয়ে নিন(BEST BUDGET GAMING PC 30K)

 


30 হাজার টাকার বেস্ট বাজেট গেমিং পিসি বানিয়ে নিন (BEST BUDGET GAMING PC 30K)


কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় সকলেরই গেমিং পিসি বিল্ড করার একটি স্বপ্ন থাকে। আমিও দীর্ঘদিন ধরে সেই স্বপ্নই লালন করে আসছিলাম। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতা ও বাজেট ঘাঠতির কারণে স্বপ্নের সেই গেমিং পিসি কনফিগারেশনটি আর সেটআপ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

কম্পিউটার মার্কেটও দীর্ঘদিন ধরে অগোচালো। প্রোডাক্টের আকাশচূম্বী দাম, প্রোডাক্ট সংকট ও টাকার মুদ্রাস্ফীতিতে ডলারের বেহাল দশায় কনজুমার হিসেবে আমিও বেশ দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যাই।

অন্যদিকে Intel এর 12 Gen এর চমক শেষ হতে না হতেই 13 Gen লঞ্চ হওয়ার তারিখ ঘোষণা আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। এরই মধ্যে AMD এর Ryzen সিরিজের বেশ কিছু প্রসেসরের হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় আমি অনেকটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে যাই।

প্রসেসর যেহেতু কম্পিউটার প্রধান হার্ডওয়্যার। সেহেতু পিসি বিল্ডের শুরুটা প্রসেসর সিলেকশনের মাধ্যমেই করতে হয়। কিন্তু প্রসেসর সিলেকশনই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়ে যাচ্ছিল। কোনটা রেখে কোনটা সিলেক্ট করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না।

আমি বারাবরই Intel প্রসেসরে আগ্রহী। তবে AMD এর প্রসেসরের দাম কমে যাওয়ায় ভ্যালু ফর মানির কথা ভেবে এক পর্যায়ে Intel বাদ দিয়ে AMD এর প্রসেসরের দিকেই ঝুঁকতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু Intel এর 13 Gen এর পারফর্মেন্স দেখে কিছুতেই AMD এর দিকে যেতে চাচ্ছিলাম না। যদিও 13 Gen এর দাম অনেক বেশি। তবুও মন বলছিল স্বপ্নের গেমিং পিসি বিল্ডে Intel ছাড়া অন্য কোনো প্লাটফর্মেই যাওয়া উচিত হবে না।

তাছাড়া, নতুন জেনারেশনের প্রসেসরের পারফর্মেন্স স্কিপ করে আগের জেনারেশন সিলেক্ট করাটা বোকমিও বটে। তাই পুরোপুরি ভাবে 12 Gen স্কিপ করে 13 Gen এ চলে এলাম।

যাইহোক, আমার গেমিং কম্পিউটারটি তৈরি করতে যেই কম্পোনেন্ট গুলো ব্যবহার করেছি এবং কোন কম্পোনেন্টটি কি কারণে সিলেক্ট করেছি তা আপনাদের অবশ্যই বলব। এই বিল্ডের কম্পোনেন্ট সিলেকশনের উদ্দেশ্য বুঝার মাধ্যমে গেমিং পিসির দাম সম্পর্কে আপনারা অবগত হতে পারবেন।


প্রসেসর – Processor (CPU)

Intel i5 and i7

Processor হিসেবে আমি নিয়েছি Intel i5-13600K, এটি 13 জেনারেশনের একটি প্রসেসর। যার Base Frequency 3.50 GHz এবং Maximum Turbo Frequency 5.10 GHz. তাছাড়া প্রসেসরটির Cache 24 MB, 14 টি Cores এবং 20 টি Threads.

13 জেনারেশনের একটি প্রসেসরটির TDP 125W, এই প্রসেসরে সর্বোচ্চ 128 GB র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে, যা আমার কাছে এনাফ মনে হয়েছে। প্রসেসরটির বড় একটি সুবিধা হলো এটিতে DDR4 এবং DDR5 এর র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে।

DDR4 এর ক্ষেত্রে Up to 3200 MT/s এবং DDR5 এর ক্ষেত্রে Up to 5600 MT/s এর ram ব্যবহার করতে পারবেন অনায়াসেই। এই প্রসেসরে Graphics হিসেবে দেওয়া আছে UHD Graphics 770, যার Base Frequency 300 MHz এবং Max Dynamic Frequency 1.50 GHz.

প্রসেসরটির UHD 770 Graphics এর মাধ্যমে আপনি প্রায় সব ধরণের কাজ ভালো করেই করতে পারবেন। গেমিং এর ক্ষেত্রে এন্টি লেভেলের গেমিং করতে পারবেন। আর একথা সকলেই জানেন যে, ভালো গেমিং করার ক্ষেত্রে ডেটিকেটেড Graphics Card প্রয়োজন।

তবে আপনি যদি এন্টিলেভেলের গেমিং করতে চান, তবে যে কোনো ধরণের গেমিংয়ে ভালো fps পাবেন। আমি দীর্ঘদিন যাবত Intel i3 4th প্রসেসর ব্যবহার করেছি, যেটাতে Intel HD Graphics 4400 ছিল। সেটাতেই এন্টি লেভেলের গেম খেলা যেতো।

Intel HD Graphics 4400 এর তুলনায় UHD 770 Graphics কয়েকগুণ শক্তিশালী। তাই হলফ করে বলা যায় 13 জেনারেশনের Intel i5-13600K প্রসেসরটির UHD 770 Graphics দিয়েই গেমিং পারফর্মেন্স ভালোই পাবেন।

তবে আপনি যদি এই প্রসেসরের সাথে একটি ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, তবে পৃথিবীর যে কোনো গেম 4k Hight Setting এ ভালো FPS এ খেলতে পারবেন। এক কথায় বলা যায়, Intel i5-13600K প্রসেসরটি যে কোনো কাজের জন্য সেরা একটি চয়েজ হতে পারে।

প্রসেসরটির বক্সের সাথে কোনো ফ্যান থাকেন না। প্রসেসরটিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। Intel i5-13600K প্রসেসরটি আমি নিয়েছিলাম ৩৯,৫০০/- টাকা দিয়ে। বর্তমান মার্কেটে প্রসেসরটির দাম কম-বেশি হতে পারে।

সিপিইউ কুলার – CPU Cooler 

বিল্ডের Intel i5-13600K প্রসেসরটিকে কুলিং করতে Cooler হিসেবে নিয়েছি Deep Cool LE500 All In One 240mm LED Liquid CPU Cooler টি। কুলারটির বিল্ড কোয়ালিটি ভালোই। কুলারটিতে রয়েছে দুটি ফ্যান RGB সহ।

যদিও আমার প্রথম চয়েজ ছিল NZXT এর কুলার। তবে NZXT Cooler এর দাম বেশি হওয়ায় আর নিতে পারনি। কারণ, আমার বাজে ছিল নির্দিষ্ট। তবে DeepCool এর LE500 All In One 240mm কুলারটিকে খারাপ বললে চলবে না। পারফর্মেন্স চেক করে ভালোই মনে হয়েছে।

Intel i5-13600K প্রসেসরটিকে বেশ ভালো ভাবেই কুলিং করতে সক্ষম হয়েছে DeepCool LE500 All In One 240mm LED Liquid CPU Cooler টি। তাই এই কুলারটি নিয়েই আমি সেটিস্ফাইড।

DeepCool এর LE500 All In One 240mm কুলারটিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। আমি DeepCool এর এই LE500 All In One 240mm মডেলের LED Liquid কুলারটি কিনেছিলাম ৬,০০০/- টাকায়।

মাদারবোর্ড – Motherboard

এই বিল্ডে Motherboard হিসেবে নিয়েছি GIGABYTE B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen ATX Motherboard টি। যদিও Intel i5-13600K প্রসেসরটির জন্য B660 মডেলের মাদারবোর্ড না নিয়ে Z790 মডেলের মদারবোর্ড গুলোই সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়।

তবে বাজেটের কথা ভেবে B660 মডেলের মাদারবোর্ডই নিয়েছি। আমি মনে করি একটি B660 মাদারবোর্ডেই 13600K প্রসেসরটি খুব ভালোই চলবে। তবে B660 মডেলের মাদারবোর্ডে 13600K প্রসেসর ব্যবহার করতে Motherboard এর BIOS আপডেট করে নিতে হবে।

GIGABYTE এর B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen মডেলের মাদারবোর্ডটি মূলত একটি ATX Motherboard, যেটাতে র‌্যাম স্লট ৪ টি এবং 128 GB পর্যন্ত র‌্যাম ব্যবহার করা যাবে। মাদারবোর্ডটিতে PCIe 4.0 ফিচার রয়েছে।

Motherboard এর heating গুলো বেশ ভালোই। মাদারবোর্ডটিতে 1 x HDMI port এবং 1 x DisplayPort রয়েছে। তাছাড়া, SSD ব্যবহারের ৩ টি স্লট এবং গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহারের ৩ টি স্লট রয়েছে।

আমি যেহেতু সাধারণত কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজে কম্পিউটারটি ব্যবহার করবো, যেহেতু B660 মডেলের মাদারবোর্ডটিই আমার জন্য যথেষ্ট ভালো পারফর্মেন্স দেবে বলে মনে করি। ১০/১২ দিন ব্যবহার করে Motherboard এর পারফর্মেন্স ভালোই মনে হয়েছে।

GIGABYTE এর B660 GAMING X AX DDR4 12th Gen ATX Motherboard টিতে রয়েছে ৩ বছরের ওয়ারেন্টি। আমি এই মাদারবোর্ডটি কিনেছিলাম ১৯,০০০/- টাকায়।

র‌্যাম – RAM

RAM 

RAM হিসেবে আমি Corsair Vengeance RGB Pro 8GB DDR4 3200MHz White Heatsink মডেলের ডুয়েল স্টিক RAM নিয়েছি। দুটো র‌্যামই RGB এবং ভালো মানের হিস্টিংয়ে বেস্টিত। দেখতেও বেশ সুন্দর।

র‌্যামগুলো 3200MHz এ চলবে। আমি এই বিল্ডে আপাতত 16GB র‌্যাম ব্যবহার করেছি। তবে অদূর ভবিষ্যতে 32GB র‌্যাম করার চিন্তা আছে। র‌্যামগুলোর পারফর্মেন্স খুবই ভালো।

Corsair ব্র্যান্ডের Vengeance RGB Pro 8GB DDR4 3200MHz White Heatsink মডেলের ডুয়েল স্টিক RAM গুলো আমি ৮,৬০০/- টাকায় নিয়েছিলাম। এই র‌্যামগুলোর ওয়ারেন্টি লাইফটাইম।

এসএসডি – SSD

এই বিল্ডে SSD হিসেবে নিয়েছি HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe Internal SSD টি। আমার প্রথম চয়েজ ছিল Samsung 990 Pro 1TB PCIe 4.0 M.2 NVMe SSD টি। তবে Samsung এর SSD টির দাম অনেক বেশি। তাই বাজেটের মধ্যে SSD নিতে গিয়ে আপাতত HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe SSD টি নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে HP EX900 M.2 500GB এসএসডি দিয়েই পিসিটি রান করছি। পাশাপাশি আরো একটি 120GB SATA SSD ব্যবহার করছি। তবে অবশ্যই আমি অদূর ভবিষ্যতে Samsung 990 Pro 1TB PCIe 4.0 M.2 NVMe SSD টি এই বিল্ডে যোগ করবো ইনশাআল্লাহ।

HP EX900 M.2 এটি একটি 500GB এসএসডি। এটিতে PCIe 3.1 x4 সাপোর্ট করবে এবং এর Max Sequential Read: Up to 2,100 MBps এবং Max Sequential Write: Up to 1,300 MBps.

HP EX900 M.2 500GB PCIe NVMe Internal SSD টির দাম রাখা হয়েছে ৪,৩০০/- টাকা। এটি একটি অফার প্রাইজ। রেগুলার প্রাইজ ৫ হাজার টাকার উপরে। তবে ভবিষ্যতে এর দাম কম-বেশি হতে পারে।  


শেষ কথাঃ

একটি গেমিং পিসি বিল্ড অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। যদিও আমার পিসিটির মেইন উদ্দেশ্য গেমিং নয়। তবুও এই ধরণের পিসি গেমিং বলেই সবার কাছে পরিচিত। আমার এই পিসিটি বিল্ড করতে ১,৭০,০০০/- টাকা লেগেছে।

আপনাদের বাজেট যদি ১,৭০,০০০/- টাকার আশেপাশে হয় তবে হুবহু এই বিল্ডটি হতে পারে আপনার জন্য সেরা চয়েজ। অথবা কিছু কম্পোনেন্টের ব্র্যান্ড, মডেল বাদ দিয়েও আপনি নিজের মতো করে একটি পিসি সাজাতে পারেন।

যাইহোক, পরিশেষে সবাইকে বলব, আপনারা যদি কম্পিউটার নির্ভর কোনো কাজ করেন বা ফ্রিল্যান্সিং করেন যে কোনো ক্যাটাগরিতে, তবে আপনার উচিত আপনার কাছে যা আছে তাই দিয়ে কাজ করতে থাকুন। একসময় এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ গুলোই আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে। যেমনটা আমার বেলায় ঘটেছে।

আমার এই গেমিং পিসি বিল্ডটি নিয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তবে অনায়াসেই কমেন্ট করুন। পিসি সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ লাগলেও কমেন্ট করুন। যথাসাধ্য আপনাকে সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। সবাইকে ধন্যবাদ


আরো পড়ুন:

  1. আই ফোন সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত কোনো 
  2. প্রসেসর কি 
  3. বাংলাদেশে dslr ক্যামেরার দাম 
  4. সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?
  5. বিশ্বের সেরা 11টি জনপ্রিয় অনলাইন মোবাইল গেম
  6. নতুন গেমিং ল্যাপটপ 2022
  7. নতুন গেমিং পিসি 2022 |
  8. ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের মধ্যে ভালো ফোন 
  9. কম্পিউটার ভাইরাস কি ? কম্পিউটারে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি ?
  10. 10000-এর নীচে সেরা ফোন 


0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments