স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
এখান থেকে জানতে পারবেন স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে,স্টুডেন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর সুবিধা-অসুবিধা,স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট করতে কত টাকা লাগে এবং সবশেষে জানতে পারবেন স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট কোন ব্যাংকে করা ভালো হবে।
যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ঢাকার শহর বা নিজ বিভাগ ছেড়ে অন্য বিভাগে গিয়ে পড়াশোনা করে তাদের যে কোন ব্যাংকের একটা স্টুডেন্ট কার্ড থাকলে অনেক উপকার হয়।অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা খরচ চালানোর জন্য প্রতি মাসে বাসা থেকে অনেক টাকা আনতে হয় ।
সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ বা নগদে টাকা আনে । মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা লেনদেন করলে প্রতি হাজারে ২০ টাকা কেটে নেয়।হিসাব করলে দেখা যায় বাসা থেকে টাকা আনতে প্রতি বছর অনেক টাকা খরচ হয় । সেক্ষেত্রে আপনার একটা স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট থাকলে বাসা থেকে টাকা আনার খরচ অনেক কমে যাবে।
একটা স্টুডেন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে বছরে প্রায়২ লক্ষ টাকা লেনদেন করতে পারবেন এতে আপনার এক বছরে মাত্র ৩৫০ টাকা বা ৫০০ টাকা ব্যয় হবে। অধিকাংশ ব্যাংকে স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম প্রায় একই। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক ।
স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম হলো প্রথমে আপনাকে যেকোনো একটা ব্যাংক সিলেক্ট করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬১ টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ৬ টি ব্যাংক সরকারি। যথা- সোনালী ব্যংক লিমিটেড, রুপালী ব্যাংক লিমিটেড,জনতা ব্যংক লিমিটেড,অগ্রনী ব্যাংক লিমিটেট,বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড,ব্যাসিক ব্যাংক লিমিটেড ইত্যাদি এগুলো হলো ব্যাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক।
এছাড়া অন্য যে ৫৫ টি ব্যাংক রয়েছে এগুলো হলো বেসরকারি ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ।আপনি স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলাqর জন্য যেকোনো একটি ব্যাংক পছন্দ করুন। চিন্তার কোনো কারন নাই অধিকাংশ ব্যাংকে স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলা জায়।
- স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম হলো প্রথমে আপনে যে ব্যাংক নির্ধারণ করবেন ওই ব্যাংকের শাখায় চলে যাবেন।
- যাওয়ার পর ব্যাংকে কর্মরত যেকোনো ব্যক্তিকে একাউন্ট খোলার কথা বল্লে তারা আপনাকে যে কাউন্টারে একাউন্ট খুলে সেখানে পাঠাবে।
- তার কাছে যাওয়ার পর আপনে তাকে বলবেন আপনি স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন তারপর আপনাকে সে একাউন্ট খোলার ফরম দিবে। আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্ম টি পুরন করবেন।
- এর পর আপনি যাকে নমিনি দিবেন তার পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও এনআইডি কার্ডের(NID Card)ফটে কপি প্রয়োজন হবে।
আপনার কাজ শেষ। এরপর তারা আপনাকে একটা তারিখ দিবে ওই তারিখে ব্যাংকের শাখায় আসতে বলবে।এখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার দেওয়া তথ্য গুলো যাচাই করে দেখবে সঠিক কি না। আপনার দেওয়া তথ্য গুলো সঠিক থাকলে স্টুডেন্ট একাউন্ট কনফার্ম করে দেওয়া হবে ।
কনফার্ম করার কিছু সময় পড় থেকে স্টুডেন্ট ব্যাাংক একাউন্ট ব্যবহার করতে পাড়বেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পক্ষের দেওয়া তারিখে গেলে আপনাকে তারা চেক বই ও এটিএম কার্ড(ATM Card)দিবে।
স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যা যা লাগবে:
১. যেকোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইডি কার্ডের ফটোকপি।
২. শিক্ষার্থীর একাডেমিক মাকশিট বা ট্রান্সক্রিপ্ট এর ফটোকপি।
৩. জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)। যদি জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি অন্য কারো নামে অ্যাকাউন্টটি করতে হবে। যার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র আছে।
৪. পাসপোর্ট সাইজের ছবি এক বা দুই কপি।
৫. নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং এককপি ছবি (আপনার অবর্তমানে যে ব্যক্তি আপনার অ্যাকাউন্টের দায়িত্ব নেবে)।
৬. ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)। তবে আপনি ইসলামী ব্যাংকে ১০০ টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা লাগবে।
স্টুডেন্ট একাউন্ট কিভাবে খুলবেন:
স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলা একেবারে সহজ। উপরের যেসব কাগজপত্র গুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ব্যাংকে যাবেন। সেখানে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আপনি যদি স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার কথা বলেন, তাহলে তারা আপনাকে একটি ফরম দিবে। সেটা আপনি সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিলেই আপনার একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।
স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা:
১. স্টুডেন্ট ব্যাংক একাউন্ট এর কোন ধরনের চার্জ না থাকায়, সম্পূর্ণ ফ্রিতেই ব্যাংকিং করা যায়।
২. অল্প কিছু টাকা জমা করে একাউন্ট একটিভ করা যায়।
৩. ফ্রিতে এটিএম কার্ড ব্যবহার করা যায়। তবে কিছু কিছু ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট এ এটিএম কার্ড প্রোভাইড করে না, কিন্তু চেক পাবেন।
৪. বাৎসরিক কোন সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না।
৫. আপনি একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট থেকে প্রায় ২৫,০০০ টাকা ফ্রিতে উত্তোলন করতে পারবেন (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)।
৬. শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ফি প্রদান করতে পারবেন।
৮. গুগল এডসেন্স এর টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
৯. যেকোনো ধরনের রেমিটেন্স আনতে পারবেন।
১০. কেনাকাটার বিল প্রদান করতে পারবেন।
১১. অনলাইন ব্যাংকিং ফ্রিতে পাবেন (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)।
১২. স্টুডেন্ট একাউন্ট থেকে পরবর্তীতে সেভিং একাউন্টে রূপান্তর করতে পারবেন।
এছাড়া আরো অনেক ধরনের সুবিধা স্টুডেন্ট একাউন্ট এর রয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল। যে ব্যাংকে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলবেন, সে ব্যাংক থেকে অবশ্যই বিস্তারিত জেনে নিবেন।
স্টুডেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধা:
১. স্টুডেন্ট একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বেশি উত্তোলন করতে পারবেন না।
২. স্টুডেন্ট একাউন্ট এ লেনদেনের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)।
৩. কিছু ব্যাংকে এটিএম কার্ড অথবা চেক পাবেন না।
৪. স্টুডেন্ট একাউন্ট এর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে। সেটা আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইডি কার্ডের মেয়াদ অনুযায়ী।
কোন ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট একাউন্ট করবেন:
বাংলাদেশের যে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই আপনি স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকারের অধিভুক্ত প্রায় ৫০টি ব্যাংক রয়েছে। যেমন: ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ইত্যাদি।
তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি স্টুডেন্ট একাউন্ট ব্যবহৃত হয় ইসলামী ব্যাংক এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের। কারণ এ দুটি ব্যাংকের অনেক এটিএম বুথ আছে। যার ফলে আপনি যেকোন জায়গা থেকে এটিএম এ টাকা উঠাতে পারবেন। আপনার যাতায়াতের সুবিধা অনুযায়ী আপনি ব্যাংক নির্ধারণ করুন।
পরিশেষে, একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্টুডেন্ট একাউন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্টুডেন্ট একাউন্ট এ কোন ধরনের চার্জ না থাকায়, আপনি ফ্রিতে একাউন্টের লেনদেন সহ বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। তাই আপনি চাইলে স্টুডেন্ট একাউন্ট করতে পারেন।
তবে স্টুডেন্ট একাউন্ট এর লিমিট এ আমার মনে হয় কোন সমস্যা হবে না। কারন বেশি ভাগ ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্টে প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা লেনদেন করতে দেয়। আর একজন স্টুডেন্ট এর জন্য প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা লেনদেন যথেষ্ঠ বলে আমি মনে করি।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন