বাউন্স রেট কি? বাউন্স রেট কমানোর সেরা উপায় ।

 


বাউন্স রেট কি? বাউন্স রেট কমানোর সেরা উপায় 


টপিক সূচি 


Bounce Rate -বাউন্স রেট কি?

Bounce Rate হচ্ছে Google Analytics এর একটি মেট্রিক। বাউন্স রেট বুঝার আগে অবশ্যই আপনাকে বাউন্স (Bounce) সম্পর্কে বুঝতে হবে।

বাউন্স হলো এমন একটি বিষয়, আপনার ওয়েবসাইটের কোন পেজে একজন ভিজিটর প্রবেশ করার পর সে ঐ পেজে থাকাকালীন সময়ে কেমন এনগেজমেন্ট হলো, অর্থাৎ একজন ভিজিটর আপনার সাইটের একটি পেজ থেকে অন্য পেজে গেল কিনা, পেজের কোন লিংকে ক্লিক করলো কিনা, ওয়েবসাইটের মেনুতে ক্লিক করলো কিনা ইত্যাদি এরই উপর ভিত্তি করে গুগল অ্যানালিটিক্স বাউন্স রেট (Bounce Rate) নির্ণয় করে।

ওয়েবসাটের বাউন্স রেট যত কম হবে ওয়েবসাইট ততই ভালো পারফর্মেন্স করছে এটা ধরে নেওয়া যায়। কেননা, বাউন্স রেট কম থাকাটা SEO (এসইও) বা গুগল রেংকিংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যে কোন ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট দেখার জন্য Google Analytics Tool ব্যবহার করতে পারেন। গুগল এনালাইটিক্স টুলস থেকে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের যে কোন পেজের বাউন্স রেট তথ্য দেখতে পারবেন।


বাউন্স রেট কিভাবে কাজ করে ?

গুগল বা যে কোন সার্চ ইঞ্জিন সবসময় তাদের সার্চ কোয়েরিতে সবচেয়ে রিলেভেন্ট রেজাল্ট প্রদর্শন করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো যদিও বট দ্বারা পরিচালিত হয়।

তবে যে কোন ওয়েবসাইটের রিলেভেন্ট পেজগুলো তারা খুব সহজেই  তাদের ইউজারদের এনগেজমেন্টের ভিত্তিতে নির্ণয় করতে পারে। এরই মধ্যে বাউন্স রেটকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।

মনে করুন আপনার ওয়েবসাইটের একটি পেজের বাউন্স রেট ৯০% -এর উপরে। এখন গুগল এটা খুব সহজেই বুঝতে পারে যে আপনার এই পেজ থেকে ভিজিটরটা উপকৃত হচ্ছে না। অথবা ভিজিটর তার কাঙ্খিত উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারছে না।

তাই ওয়েবপেজটিতে আসা বেশীরভাগ ভিজিটর সময় না দিয়েই পেজটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। গুগল যখন এই বিষয়টা বুঝতে পারে তখন আপনার পেজটিকে সার্চ রেজাল্ট থেকে ড্রপ করে দেবে। এতে আপনি রেংকিংয়ে পিছিয়ে পড়বেন।

ঠিক তেমনীভাবে আপনার ওয়েবপেজের Bounce Rate যদি ৩০% এর কম হয়, তখন গুগল বুঝে নেয় যে, আপনার ওয়েবপেজ থেকে ভিজিটরটা নিশ্চই উপকৃত হচ্ছে, তাই সময় দিয়ে পেজটি পড়ছে।

গুগল যখন এটা বুঝতে পারে তখন এই পেজটিকে সার্চ রেজাল্টে উপরে নিয়ে আসে। এভাবেই একটি ওয়েবসাইটের রেংক আপ (Rank up) হয়।

যদিও Google algorithm -এ 200 টিরও বেশী Ranking factor রয়েছে। তবে 1-10 এর মধ্যে থাকা একটি রেংকিং ফ্যাক্টর হলো বাউন্স রেট। তাই ওয়েব সাইটের Bounce Rate কমিয়ে রাখার চেষ্টা আপনাকে করতেই হবে।


বাউন্স রেট বেশি হলে কি ধরনের সমস্যা হয়?

সবই না হয় বুঝলাম, যদি সাইটের বাউন্স রেট বেশি হয় তাহলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে? খুব সাধারন একটা ব্যাপার চিন্তা করুন। গুগল সব সময়ই চায় সার্চ কোয়েরিতে সব থেকে রিলেভেন্ট রেজাল্ট টাকে দেখাতে। 

কথার কথা এখন আপনার ওয়েবসাইটের বাউন্সরেট যদি হয় ৮০% তার মানে অধিকাংশ ভিজিটর ই আপনার সাইটে প্রবেশ করে সাথে সাথেই আবার বের হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সে কাংখিত রেজাল্ট টি পায়নি। গুগল তখন বুঝতে পারে এই সার্চ কোয়েরির জন্য আপনার ওয়েবপেজটি আপ টু দা মার্ক না। তখন গুগল আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ রেজাল্টে পেছনে ফেলে অন্য ওয়েবাসইট কে জায়গা দিবে।

আবার যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ বাউন্সরেট যদি ৩০% হয় তারমানে ঐ পেজে ভিজিটর প্রবেশ করে আরো কিছু পেজ ভিজিট করছে। তাহলে গুগল বুঝতে পারে যে ভিজিটর তার কাংখিত রেজাল্ট টি খুজে পেয়েছে। অর্থাৎ কম বাউন্সরেট সার্চ ইঞ্জিনকে এই জিনিসটা বুঝাতে সমর্থ হয় যে সার্চ কোয়েরির জন্য এই রেজাল্ট টি  রিলেভেন্ট।


বাউন্স রেট কমানোর সেরা ৫টি উপায়

০১, পেজ লোডিং টাইম

ওয়েব পেজের লোডিং টাইম কমানোর জন্য ভালো হোস্টিং ব্যবহারের বিকল্প নেই। আপনার ওয়েব পেজের লোডিং টাইম যদি ৩ সেকেন্ডের কম হয় তবে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরদের এনগেজমেন্ট খুব ভালো হবে।

এতে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেশী প্রবেশ করারও চান্স রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই চাই অল্প সময়ের মধ্যেই বেশী কিছু আয়ত্ব করে নিতে। তাই ওয়েবসাইটে ভিজিটর ধরে রাখতে বাউন্স রেট কমিয়ে রাখার বিকল্প নেই।

আপনার ওয়েব পেজের লোডিং টাইম যদি ২০-৩০ সেকেন্ড হয় তবে ৯৯% ভিজিটরই আপনার পেজে প্রবেশ করতে চাইবে না। তারা লিংকে ক্লিক করে লোডিং টাইমের জন্য বিরক্ত হয়ে বের হয়ে যাবে। এভাবেই ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট অনেক বেড়ে যায়।

তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন ওয়েবসাইটে ভালো মনের হোস্টিং ব্যবহার করার জন্য। ভালো হোস্টিং ব্যবহারের পাশাপাশি ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটা পেজের সকল কন্টেন্টকে ভালো করে অপটিমাইজ করা প্রয়োজন।


০২, ইন্টারনাল লিংকিং

আমাদের যদি কেউ প্রশ্ন করে ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কিভাবে কমাতে হয়? তবে আমি নির্দ্বীধায় বলব ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি পেজের জন্য Internal linking  করুন।

ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট কমানোর জন্য Internal linking খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভিজিটরকে সাইটে বেশি সময় আটকে রাখার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ইন্টার্নাল লিংকিং। ধরা যাক, আপনার ওয়বেসোইটে SEO ক্যাটাগরিতে ৪টা পোষ্ট।

  • বেসিক এসইও
  • আউটরিচ
  • গেষ্টপোষ্ট
  • ব্যাকলিংক

এখন আপনি বেসিক SEO আর্টিকেলে রিলেভেন্ট ওয়েতে অন্যপোষ্টগুলো যেমন আউটরিচ, গেষ্টপোষ্ট এবং ব্যাকলিংকের পোষ্ট গুলো ইন্টার্নাল লিংক করে দিলেন। এরফলে যেটা হবে, ভিজিটর বেসিক SEO এর পাশাপাশি অণ্য ব্যাপার গুলো সম্পর্কেও জানতে আগ্রহী হয়ে লিংকে ক্লিক করবেন এবং আরো বেশি সময় সাইটে থাকবেন।

ইন্টারনাল লিংকিং বাউন্স রেট কমানোর পাশাপাশি এসইও (SEO) এর ক্ষেত্রেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ইন্টারনাল লিংকিং করার মাধ্যমে ওয়েবপেজের ভ্যালু বৃদ্ধি পায়।

একজন ভিজিটর Internal linking এর মাধ্যমেই এক পেজ থেকে অন্য পেজে প্রবেশ করে। ফলে ওয়েব পেজের এংগেজমেন্ট ও এভারেজ টাইম বৃদ্ধি পায় এবং Bounce Rate অনেকাংশেই কমে যায়।


০৩, অতিরিক্ত এবং এলোমেলো অ্যাড ব্যবহার

কোন ভিজিটরই ওয়েবসাইটে অ্যাড দেখার জন্য প্রবেশ করে না। তারা মূলত তাদের কাঙ্খিত কন্টেন্ট পড়া বা জানার উদ্দেশ্যেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে।

কোন পেজে যদি খুব বেশী অ্যাড থাকে তবে ভিজিটরটা বিরক্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে এলোমেলো ads দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

গুছালো ads খবু বেশী সমস্যা করে না। কোন ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট বেশী হলে গেলে Pop up ads পুরোপুরি ভাবেই এড়িয়ে চলা উত্তম।


০৪, অনাকাঙ্খিত পেজ টাইটেল

ওয়েব পেজের টাইটেলে কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত কিওয়ার্ড ব্যবহার করা যাবে না। অনেকেই আছে শুধুমাত্র ভিজিটর পাওয়ার উদ্দেশ্য করে এমন কিছু কিওয়ার্ড ব্যবহার করে যা প্রকৃতপক্ষে ভিজিটরদের উপকারে আসে না।

তাই পেজের টাইটেলে এমন অপ্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অর্থাৎ, টাইটেলে এমন লেখা দেওয়া যাবে না, যেটার সাথে আপনার পেজের মূল কন্টেন্টের মিল নেই।

এই ধরণের টাইটেলের জন্য যদিও ওয়েবসাইটে কিছুটা বেশী ভিজিটর আসে, তবে প্রকৃতপক্ষে ওয়েবসাইটের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়।

চেষ্টা করবেন কিওয়ার্ড রিসার্চ করে কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য। এতে ওয়েবসাইটের ভিজিটর বাড়বে এবং আপনার কন্টেন্ট প্রকৃতপক্ষেই ভিজিটরদের কাজে আসবে।


০৫, ওয়বেসাইটে ব্যবহৃত ফন্ট

ওয়েব পেজে সুন্দর ও সুস্পষ্ট ফন্ট ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ফন্টের সাইজ এমন ভাবে রাখতে হবে যেনো ভিজিটরদের পড়তে কষ্ট না হয়।

Font size খুব বেশী ছোট করা যাবে না এবং খুব বেশী বড়ও রাখা যাবে না। সবসময় মিডিয়াম ফন্ট ব্যবহার করা উচিত।

ফন্টের জটিলতার কারণে অনেক ভিজিটর কন্টেন্ট না পড়েই ওয়েবসাইট থেকে বেরিয়ে যায়। তাই Font size সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

সঠিক Font size ভিজিটরদেরকে আর্টিকেল পড়তে উৎসাহ যোগায়। তাই ওয়েবসাইটে যথাযথভাবে সঠিক ফন্ট সাইজ ব্যবহার করুন।

শেষ কথা,,

Google সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন হওয়ায় আমরা প্রত্যেকে Google কেই টার্গেট করি। আর গুগল এলগরিদম এর মধ্যে Bounce Rate এর অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য বাউন্স নিয়ে প্রত্যেকেরই ভাবা উচিত।

Bounce Rate এমন একটি বিষয় যেটা আপনার সাইটের ওভারঅল কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। তাই এটিকে এড়িয়ে চলা মোটেও ঠিক হবে না।

ওয়েব সাইটের কন্টেন্ট কোয়ালিটি বৃদ্ধিকরণে সর্বদাই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ওয়েব পেজের কন্টেন্টে যত বেশী কোয়ালিটি দিতে পারবেন তত সহজেই রেংকিংয়ে চলে আসবেন।

প্রিয় পাঠক, আশাকরি বাউন্স রেট কি এবং ওয়েবসাইটের Bounce Rate কিভাবে কমানো যায় তার উপর স্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছি। এই বিষয়ে যদি কারো কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন:


0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments