ট্রেড লাইসেন্স কি ? ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম কি ?
প্রতিটি উদ্যোক্তার জন্য তার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সাপেক্ষে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স করা। ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসায়ীকে দেশের যেকোনো স্থানে তার ব্যবসা পরিচালনা করার স্বাধীনতা দেয়। ব্যবসায়ের অনুকূলে যেকোনো কার্যক্রমের জন্য ট্রেড লাইসেন্স একটি অবধারিত নথি।
এর মাধ্যমেই পরিপূর্ণভাবে একজন ব্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যতা পান। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানের পরিব্যপ্তি বৃদ্ধির একটি মোক্ষম বাহক হিসেবে কাজ করে এই অনুমতি পত্রটি। তাই চলুন, জেনে নিই ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি।
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কোথায় যেতে হয় ?
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আবেদনকারীকে প্রথমেই ঠিক করতে হবে যে তার ব্যবসাটি আসলে কোন স্থানীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত হবে। স্থানীয় সরকার বলতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা বা উপজেলা পরিষদকে বোঝায়।
ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে কোন অঞ্চল ভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হবে তা নির্বাচন করতে হবে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটিতে অঞ্চল রয়েছে দশটি করে। অঞ্চলের অফিস থেকেই ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফর্ম পাওয়া যাবে এবং সেখান থেকেই চূড়ান্তভাবে ট্রেড লাইসেন্সটি দেওয়া হবে।
ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করার যোগ্যতা :
- ট্রেড লাইসেন্স লাইসেন্স আবেদন করার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে৷
- নারী কিংবা পুরুষ উভয়ই ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবে।
- ট্রেড লাইসেন্স পেতে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স হতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম |
স্থানীয় সরকারের নিকট থেকে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়৷ ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করুন :
- স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে আবেদন ফরম নিন ৷
- আবেদন ফরম এর সাথে সকল কাগজপত্র জমা দিন ৷
- লাইসেন্স প্রদানকারী অফিস থেকে কাগজপত্র গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে ৷
- স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে সুপারভাইজার আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবেন।
- সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত ফি দেওয়ার পরে তারা আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দিবে৷
আপনার ব্যবসা যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়ে থাকে তাহলে অনলাইন থেকেই ট্রেড লাইসেন্স ফরম ডাউনলোড করে ঘরে বসে পূরণ করে নিয়ে যেতে পারেন।
যেসব অফিসে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করা যায় :
- উপজেলা কিংবা জেলা পরিষদ
- সিটি কর্পোরেশন
- পৌরসভা
- ইউনিয়ন পরিষদ
- অনলাইন (ই-ট্রেড লাইসেন্স)
আপনি যে জায়গায় ব্যবসা শুরু করতে চান, সেই জায়গাটি যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আওতাধীন, সেখানে যোগাযোগ করে ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্স করার প্রয়োজনীয় কাগজ
৩ ধরনের ট্রেড লাইসেন্স আছে, যথা:
- সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স
- ফ্যাক্টরি বা শিল্প প্রতিষ্ঠান এর জন্য ট্রেড লাইসেন্স
- ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন
এই ৩ ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য কাগজ পত্র ভিন্ন ধরনের হয়৷
সাধারন ব্যবসা’র ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র :
১. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ৷
২. তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ৷
৩. অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র ৷
৪. মেমোরান্ডাম অব আর্টিকেল অথবা সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন (কোম্পানির ব্যবসার ক্ষেত্রে)
৫. নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপ এর অঙ্গিকার নমা জমা দিতে হবে (ব্যবসা যদি যৌথভাবে পরিচালিত হয়)
৬. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর স্থান নিজের হলে কর্পোরেশন এর হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ ৷
৭. ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর স্থান ভাড়ায় হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র ও রশিদ এর ফটোকপি ৷
স্বত্বাধিকারী ব্যবসার ক্ষেত্রে :
→ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি |
অফিস বা দোকান ব্যবসায়ির নিজের জায়গা হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি। এই অফিস বা দোকানটি অবশ্যই বাণিজ্যিক স্থাপনায় হতে হবে।
সাধারণত কোন এলাকায় ভবন দুইভাবে নির্মিত হয়- আবাসিক ও বাণিজ্যিক। যেকোনো ধরনের ব্যবসার অফিস অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবনে নিতে হবে, নতুবা ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় না।
- স্বত্বাধিকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- স্বত্বাধিকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র
অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে :
জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
- ৩০০ টাকার দলিলে অংশীদারী ব্যবসার চুক্তিপত্র
- ম্যানেজিং পার্টনারের তিন কপি ছবি
- ম্যানেজিং পার্টনারের জাতীয় পরিচয়পত্র
কোম্পানির ক্ষেত্রে :
জায়গাটি অংশীদারদের কারোর নিজের হলে ইউটিলিটি বিল এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের ফটোকপি।
- কোম্পানির সার্টিফিকেট অব ইন-করপোরেশন
- কোম্পানির মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন
- ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি
- ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয়পত্র
ট্রেড লাইসেন্স করতে প্রয়োজনীয় খরচ ও সময় :
ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে যেভাবে লাইসেন্স পরিবর্তিত হয় ঠিক সেভাবেই বিভিন্ন ব্যবসার লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের মধ্যেও বেশ তারতাম্য ঘটে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে এই অঙ্কটি নিম্নে এক থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এক নামে একাধিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী খরচ আরও বাড়বে।
তবে কোম্পানির ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে স্বল্প খরচে করা যাবে। সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল-২০১৬-এর বিধিমালা অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের এই খরচের হার নির্ধারণ করা হয়।
এ ছাড়া এর সঙ্গে আকৃতি অনুসারে সাইনবোর্ড ফি, লাইসেন্স বইয়ের খরচ ও এগুলোর উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটের খরচ আছে।
ট্রেড লাইসেন্সের আনুষাঙ্গিক খরচাদি আবেদন ফর্মে উল্লেখিত ব্যাংকগুলোতে জমা দেওয়ার মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার দিন থেকে পাঁচ অথবা সাত কর্মদিবস।
ধাপে ধাপে ট্রেড লাইসেন্স করার পদ্ধতি :
প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যবসায়িক কেন্দ্রের জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করা।
আই ফর্ম এবং কে ফর্ম নামে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের দুটি ভিন্ন ধরনের ফর্ম আছে। ছোট কিংবা সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই এই ফর্মগুলো সংগ্রহ করা যাবে, যেগুলোর প্রতিটির দাম ১০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্সের ফি ভ্যাটসহ জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে।
ব্যবসার ধরন অনুযায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ফর্মটির সঙ্গে ব্যাংকে ফি জমা রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসে জমা দিতে হবে।
স্থানীয় সরকারের অধিভূক্ত আঞ্চলিক অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ব্যবসায়িক কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে অফিসে রিপোর্ট করবেন।
পূর্ববর্তী প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে এই চূড়ান্ত পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে সেই আঞ্চলিক অফিস থেকে।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন :
প্রতিটি নতুন ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে এক বছর। ট্রেড লাইসেন্সের কার্যকারিতা বহাল রাখতে হলে প্রতি বছরই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।
ট্রেড লাইসেন্স নতুন করার সময় যে সরকারি ফিগুলো প্রদান করা হয় তা হলো, ট্রেড লাইসেন্স ফি, সাইন বোর্ড ফি এবং এই দুটো মিলে যত টাকা হয় তার উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় এই খরচগুলোর সাথে যোগ হয় উৎসকর, যেটি সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার ক্ষেত্রে এটি কিছুটা কম হয়।
শেষ কথা,,
আশা করি, ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম নিয়ে এখন আর আপনার মনে কোন প্রশ্ন নেই।
আপনি যদি কোন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে অতি-শিগ্রই ট্রেড লাইসেন্স করে নিন, নয়তো আপনি আইনের চোখে একজন অপরাধী হয়ে যাবেন।
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য যে সকল কাগজপত্র দরকার পড়ে সেসব কাগজ ও ফি জমা দিন এবং ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করুন।
আসা করি ,এই কনটেন্টটি অব্যশই ভালো লেগেছে । তাই আর দেরি না করে আপানার মূল্যবান কমেন্টটি আমাদের জানিয়ে যাবেন । ধন্যবাদ""
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন