বিটকয়েন কি ? Bitcoin কিভাবে কাজ করে ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘বিটকয়েনের ধারাবাহিক পর্বের প্রথম পর্বে আমরা ‘বিটকয়েনের’ এর পরিচয় পেয়েছি। এবার দ্বিতীয় পর্বে থাকছে কি উপায়ে, ‘বিটকয়েন (bitcoin) মুদ্রা তৈরি হয়? প্রাতিষ্ঠানিক বা সরকারি কোন সহযোগিতা ছাড়া কোটি কোটি টাকার মূল্যমান সম্পন্ন সম্পূর্ণরূপে ভিন্নধর্মী এই মুদ্রা কিভাবে তৈরি হয়? কে বা কারা এসব মুদ্রা তৈরি করছে? কিভাবেই বা করছে? কোথায়বা করছে? ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হবে।
মাইনিং’ কি?
‘বিটকয়েন মাইনিং’ এর ব্যাপারে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হচ্ছে ‘মাইনিং’ ব্যাপারটি খুব বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসা হওয়ার কারণে ‘বিটকয়েন’ ব্যবহারকারীদের মধ্য তুলনামূলক অল্প সংখ্যকই এর সঙ্গে জড়িত। একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য ‘মাইনিং’ তখনই সম্ভব যখন বিষয়টি শুধু ইচ্ছার কারণে করা হচ্ছে, যেখানে লাভের ব্যপারটি খুবই গৌণ। অথবা লাভের উদ্দ্যেশ্যে দক্ষভাবে হাতে এটি তৈরি করা সম্ভব।
কেন এই কাজটিকে ‘মাইনিং’ বলা হয়? মূলত স্বর্ণখনি থেকে মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ তুলে আনার মতোই কঠিন কাজ বিটকয়েন মাইনিং,তাই এই নাম দেওয়া। যে বিটকয়েন ‘মাইনিং’ করে তাকে ‘বিটমাইনার’ বলে। মাইনার বিশেষায়িত (স্পেশালাইজড) হার্ডওয়্যারে চালানো কমপিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে ‘মাইনিং’ করে থাকে।
‘মাইনিং’ এর বিষয়টি জানার আগে গাণিতিক ফাংশন ‘হ্যাশ ফাংশন’ জানা প্রয়োজন। হ্যাশ ফাংশন হচ্ছে যেটি কোন একটা ইনপুট নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ (র্যান্ডম) একটা আউটপুট দেবে, কিন্তু আউটপুট থেকে ইনপুট বের করা কঠিন,অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও বটে।
এবং একই ইনপুটের বিপরীতে প্রতিবারই ওই একই আউটপুট আসবে। যেমন, p -এর ওপর ফাংশনটা প্রয়োগ করলে hash(p)= q। এখনে q এর অর্থ জানা এবং p অজানা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে p অর্থ জানা অসম্ভব। p এর মান পরিবর্তন না হলে hash(p) সর্বদা q হবে। তবে ভালো ‘হ্যাশ ফাংশনের’ ক্ষেত্রে p ও q এর পৃথক পৃথক মান বহন করে, অর্থাৎ ইউনিক হয়।
বিটকয়েন মাইনিং হ্যাশ ফাংশন SHA-256 ব্যবহার করা হয়। SHA (Secure Hash Algorithm) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এর ডিজাইন করা এই হ্যাশ ফাংশনটি ২০০১ সালে প্রথম প্রকাশ করা হয়। নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত জরুরি এই ব্যবস্থাটি ভাঙা সম্পূর্ণটাই অসম্ভব।
তত্ত্ব অনুযায়ী, একটা বার্তাকে হ্যাশ করে এনক্রিপ্ট করলে তার ফলাফল হবে n-পরিমাণ বিট (কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ভাষায় বিট অর্থ ০ অথবা ১)। ব্রুট ফোর্স মেথড অনুযায়ী, খুঁজে বের করা ঐ এনক্রিপ্টেড বার্তার করেস্পন্ডিং বার্তার 2^n-খানা ধাপ (স্টেপ) থাকবে। আবার, বার্থডে অ্যাটাক মেথডেও দুটো বার্তা খুঁজে বের করা যায়, যার ফলাফলও n-পরিমাণ বিট, তবে তাতে প্রয়োজন হবে 2^(n/2)খানা ধাপ। এখানে n যত বড়, বিষয়টি তত কঠিন। SHA-256-এ এই গণনাটি করা হয় ৩২ বা ৬৪-বিট word দিয়ে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানে অনেক সমস্যা সমাধান করার জন্য উপযুক্ত কোন অ্যালগরিদম নেই। সেই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য অনান্য বিষয়াদি নিয়ে প্রত্যাশিত সমাধান পাওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ব্রুট ফোর্স মেথড (Brute Force Method). অনেকটা গায়ের জোরে সমাধান বা জোর যার মুল্লুক তার রকমের।
‘বিটকয়েন মাইনিং’-এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে, কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমের কঠিন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে বিটকয়েন তৈরি করা হয়। মূলত, এই SHA-256 ফাংশন ব্যবহার করে একটা একটা করে ব্লক (block) জুড়ে একটা ব্লক চেইন (Block Chain) তৈরি করা হয়।
এগুলির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কোনো একটা ব্লক দেখে তার আগের ব্লকটাকে উল্টোপথে তৈরি অসম্ভব, এবং এই ব্লকচেইনটা সম্পূর্ণরূপে যাচাই করা সম্ভব। কারণ একটা ইনপুট থেকে একটার বেশি আউটপুট তৈরি হবে না।
যারা বিটকয়েন লেনদেনের তথ্য গুলি verify করে এবং বিটকয়েনের নেটওয়ার্ক কে আরো secure করে তোলে তাদেরকে বিটকয়েন মাইনার বলে। মাইনার রা উন্নত কম্পিউটারের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের লেনদেন নিশ্চিত এবং সুরক্ষিত করার জন্য কিছু কমিশন উপায় যা প্রতি বাইটে 21 থেকে 30 সাতোশির হয়।
বিটকয়েন কি ?
সাতোশি নাকামোতো 2008 সালে ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে কিছুটা আলাদা একটা উপায় বের করেন। যেমন ধরুন আপনি কাউকে টাকা পাঠাবেন তো ব্যাংক প্রথমে আপনার একাউন্টি ভেরিফাই করবে তারপর অন্য একাউন্টে টাকা পাঠাবে।
এই পুরো ট্রানজেকশন maintain করার জন্য ব্যাংক আমাদের কাছে চার্জ নিয়ে থাকে এবং পুরো ব্যাংকিং সিস্টেম টা কে কন্ট্রোল করে ওই দেশের সরকার। আমাদের কাছে ব্যাংক যে টাকাগলো নেই সেই টাকাগুলো ব্যাংক অন্যান্য জায়গায় ইনভেস্ট করে এবং আরো অর্থ উপার্জন করে। এটা হচ্ছে ব্যাংকের সিস্টেম ।
কিভাবে বিটকয়েন মাইনিং করবেন |
বিটকয়েনের দাম যত বাড়বে Bitcoin mining difficulty ততো কঠিন হবে। বর্তমানে বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য প্রচুর কম্পিটিশন। বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য আপনার একটি ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত কম্পিউটার থাকতে হবে যদিও বর্তমানে কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং করে বেশি প্রফিট হয় না। বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য বিভিন্ন রকম অত্যাধুনিক বিটকয়েন মাইনিং মেশিন বের হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে মূলত এখন Bitcoin mining করা হয়।
বিটকয়েন মাইনিং কি বাংলাদেশে বৈধ ?
বাংলাদেশে বিটকয়েন বৈধ নয়। বিটকয়েনের সমস্ত লেনদেন বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অবৈধ। বিটকয়েনের মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম , মানি লন্ডারিং ইত্যাদি লেনদেন দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তাই বাংলাদেশ সরকার বিটকয়েন কে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে।
বিটকয়েন এর সুবিধা :
বিটকয়েন অনেকটা প্রচলিত ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এর মত ব্যবহার করা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড ইনফো প্রদানের বদলে বিটকয়েনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাবলিক কি ও পেমেন্ট এমাউন্ট প্রদান করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিটকয়েন এর কিছু সুবিধাসমূহ সম্পর্কে।
- বিটকয়েন একটি জনপ্রিয় অর্থব্যবস্থা, যার ফলে বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো সময় কোনো বাড়তি ফি ছাড়া বিটকয়েন ব্যবহার সম্ভব
- বিটকয়েন ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ায় আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া তৎক্ষনাৎ ঘটে। চিরাচরিত ক্রেডিট কার্ড এর মত বিটকয়েনের ক্ষেত্রে ট্রানজেকশন ডাটা রেকর্ড হতে সময় লাগেনা
- বিটকয়েন ওপেন সোর্স প্রযুক্তি হওয়ায় যেকেউ লেনদেনের তথ্য দেখতে পারে, যার ফলে অর্থ ম্যানিপুলেশন এর কোনো সুযোগ নেই
- বিটকয়েন প্রযুক্তি অত্যন্ত নিরাপদ যা হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে
Bitcoin কিভাবে কাজ করে ?
ভিসা এর মতো পেমেন্ট নেটওয়ার্ক বা পেপাল এর মতো পেমেন্ট সার্ভিসের মতো প্রচলিত পদ্ধতিতে কাজ করেনা বিটকয়েন। বিটকয়েন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
বিশ্বের প্রথম মুক্ত পেমেন্ট নেটওয়ার্ক হলো বিটকয়েন, যেখানে যেকেউ অংশগ্রহণ করতে পারে। বিটকয়েন তৈরির পেছনে প্রধান উদ্দ্যেশই ছিলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে একটি ডিসেন্ট্রালাইজড পেমেন্ট ব্যবস্থা তৈরি করা।
বিটকয়েন এর অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ব্লকচেইন যা এর আদানপ্রদানের হিসাব রাখে। তবে বিটকয়েন ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ায় যেকেউ লেনদেনের তথ্য দেখতে পারে ও কেউ এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা।
চলুন আরো ভালোভাবে জানা যাক কিভাবে বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে। “মাইনিং রিগ” নামে পরিচিত স্পেশাল কম্পিউটার প্রতিটি লেনদেনের তথ্য রেকর্ড ও ভেরিফাই করে। প্রথমদিকে সাধারণ যেকোনো কম্পিউটার ব্যবহার করেই বিটকয়েন মাইনিং করা যেতো। তবে বর্তমানে বিটকয়েন মাইন করতে অনেক শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। ২০১৯সালের তথ্য অনুসারে ২০০৯সালের বিটকয়েন এর চেয়ে বর্তমানে বিটকয়েন মাইনিং করতে ১২ট্রিলিয়ন গুণ কম্পিউটিং পাওয়ার প্রয়োজন।
মূলত কম্পিউটিং পাওয়ার ব্যবহার করে মাইনিং এর মাধ্যমে বিটকয়েন মাইন করা যায়। বিটকয়েন মাইনিংকে অনেকটা লটারি বা রেসের সাথে তুলনা করা যায়। মূলত বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে যেকেউ উক্ত রেস বা লটারির পুরস্কার পেতে পারে।
এখানে পুরস্কার হলো বিটকয়েন। প্রতি লেনদেনে মাইনিং এর এই পুরস্কার পরিবর্তন হতে থাকে। বিটকয়েন লেনদেনে সহায়তা করার জন্য এসব মাইনিং কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। যারা এই কম্পিউটারগুলোর মালিক তাদেরকে বিটকয়েন মাইনার বলা হয়। বিটকয়েন লেনদেনে সহায়তা করার পুরস্কারস্বরূপ তারা বিটকয়েন পেয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এরকম বিটকয়েন মাইনিং আর আগের মত লাভজনক নেই।
প্রথমদিকে Bitcoin এর কোনো মূল্যই ছিলোনা। ২০১৮ সালে এসে এক বিটকয়েন এর মূল্য প্রায় ৭,৫০০ডলার ছিলো। তবে বিটকয়েন এর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিটকয়েন কিনতে হয়না। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংকের বিটকয়েন এর মালিক হওয়া সম্ভব। বিটকয়েন এর ক্ষুদ্রতর অংশকে সাতোশি বলা হয়। ১০০ মিলিয়ন সাতোশি মিলে তৈরি হয় এক বিটকয়েন।
সাতোশি নাকামোতো এমনভাবে বিটকয়েন এর নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন, যাতে ২১মিলিয়নের অধিক বিটকয়েন মাইন করা সম্ভব না হয়। বর্তমানে মাইন করার মত প্রায় ৩মিলিয়ন বিটকয়েন অবশিষ্ট রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২১৪০সালের মধ্যে সকল বিটকয়েন মাইন করা হয়ে যাবে।
শেষ কথা,,,
বিটকয়েন মাইনিং কী এই নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন