হার্ডডিস্ক কি ? হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে ?

 



হার্ডডিস্ক কি? হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে? হার্ডডিস্ক কত প্রকার ও কি কি?


হার্ডডিস্ক ড্রাইভ HDD চিনেন না; বর্তমান যুগে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা সবাই জানি হার্ডডিক্স ড্রাইভে আমাদের যাবতীয় ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণ করে রাখি। এতএব নিঃসন্দেহে হার্ড ডিক্স কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই এই হার্ড ডিক্স ড্রাইভ বা HDD সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।


ফলে কখনো এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা বুঝতে পারি না। এতে পড়তে হয় বিপাকে; যেহেতু এই হার্ড ডিক্সেই আমাদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডাটা বা তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে। তো চলুন, আজ আপনাদের সাথে হার্ড ডিক্স ড্রাইভ বা HDD সম্পর্কে আলোচনা করি।


হার্ডডিস্ক কি?

হার্ডডিক্স একটি Non-Valotile Electro Megnetic Data Storage Device. এটি সাধারণত কম্পিউটারের অভ্যান্তরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

এর মধ্যেই আমাদের যাবতীয় ডকুমেন্টস, অডিও, ভিডিও, ছবি, ফাইল ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে এবং পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্যও আমরা সেই ডাটাগুলো হার্ড ডিক্সেই পেয়ে থাকি। কারণ কম্পিউটার অফ করার পরও হার্ড ডিক্স ড্রাইভ ডাটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। মূলত হার্ড ডিক্স হলো কম্পিউটারের একটি ইন্টারনাল স্টোরেজ ডিভাইস।

এটি কম্পিউটার কেসের ভেতরে থাকে এবং ডাটা কেবল (PATA, SCSI, SATA ) ইত্যাদি ব্যবহার করে কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে। একটি হার্ড ডিস্ক এ এক বা একাধিক ঘূর্ণায়মান বৃত্তাকার ডিস্ক থাকে যা ডেটা সঞ্চয় করতে ব্যবহৃত হয়। 

Hard disk ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ করে এর জন্য একে ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল ডেটা স্টোরেজ ডিভাইসও বলা হয়। আশা করি hard disk কি এই বিষয়টি বুঝতে পারলেন।


হার্ডডিক্স ড্রাইভ বা HDD এর ইতিহাস

একটু ভাবুন তো, হাতের মুঠোয় ধরে রাখা যায় এমন একটি যন্ত্র, যা লক্ষ-কোটি তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে অনায়াসেই। কিন্তু বর্তমানে আমরা যা দেখছি এর সাথে হার্ডডিক্স যুগের সূচনা পর্বের পার্থক্য আকাশ-পাতাল।

মূলত কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণের ইতিহাস বেশ পুরোনো। যদিও হার্ডডিক্সের মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণের যাত্রা শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। এর আগে এই তথ্য সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করতো পাঞ্চ কার্ড৷ পরবর্তীতে একে একে ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি, ম্যাগনেটিক ট্যাপ, ম্যাগনেটিক ড্রাম মেমোরি। এরপরই শুরু হয় হার্ডডিক্সের যুগ।


হার্ডডিক্স ড্রাইভ কি

১৯৫৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক IBM (International Business Machines Corporation) এর পরীক্ষাগারে ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম হার্ডড্রাইভ আবিষ্কার করেন। সেই থেকে আজ দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের মধ্যে এই হার্ড ড্রাইভ প্রযুক্তির এতটাই উন্নত হয়েছে, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য।

সময়ের সাথে সাথে বিশাল আকৃতির হার্ড ড্রাইভ থেকে এখন এটি হাতের মুঠোয় ধারন করার মতো আকারে পরিণত হয়েছে। এবং ডাটা সংরক্ষণের পরিধিও বেড়েছে 5 MB থেকে 50+ TB পর্যন্ত। তূলনামূলক দামও অতিশয় নগন্য।

১৯৬৫ সালে বানিজ্যকভাবে বিক্রি করা প্রথম হার্ড ড্রাইভটির নাম ছিল RAMAC 305। যার আয়তন ছিল দুটো ফ্রিজের আকারের মতো এবং ওজন ছিল প্রায় এক টন। আর এই হার্ড ড্রাইভটির ধারন ক্ষমতা ছিল মাত্র 5 MB। যার প্রতি MB স্টোরেজের জন্য খরচ পড়তো 10,000$।


হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে ?

আমরা উপরে জানলাম হার্ডডিস্ক এ কতগুলো চাকতি বা ডিস্ক থাকে এই চাকতি বা ডিস্কগুলোকে বলা হয় প্লাটার। এই ডিস্কগুলো ম্যাগনেটিক হয়। এ হার্ডডিক্সের প্লাটার গুলি মিনিটে চার হাজার বারের বেশি ঘুরতে ঘুরতে তথ্য সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।


কম্পিউটারে ডাটা বা তথ্য মানেই 0 ও 1 এর খেলা, যাকে আমরা বাইনারি পদ্ধতি নামে জানি। আমাদের ডাটাগুলো কম্পিউটারের কাছে কেবল 0 আর 1 এর মাধ্যমে সাজানো কিছু কোডের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। 

কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও 0 ও 1 এর দ্বারা কীভাবে তথ্য সংরক্ষিত থাকে? এখানেই মূলত কাজে আসে চৌম্বক ক্ষেত্রের মাহাত্ম্য। কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও এর মাধ্যমেই ক্ষেত্রগুলোর এর দিক ধরে রাখে। চৌম্বক ক্ষেত্রের নির্দেশিত বাম দিকটি যদি 0 হয় তাহলে ডান দিকটি হবে 1।


আমরা সবাই জানি কম্পিউটার 0 এবং 1 বাইনারি নাম্বারে কাজ করে। চৌম্বকীয় প্লেটের পৃষ্ঠ কোটি কোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ক্ষুদ্র অঞ্চলের চুম্বকীয়করণ স্বাধীনভাবে সঞ্চালিত হতে পারে। প্লেটের চুম্বকীয় ক্ষুদ্র অংশটি একটি বাইনারি উচ্চকে নির্দেশ করে এবং টিত বাইনারি মান একের সমতুল্য। 


এটি নির্দেশ করে যে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (hard disk drive) দ্বারা সংরক্ষিত অক্ষর, সংখ্যা এবং ডেটার অন্যান্য রূপগুলি বাইনারি মানগুলির সংমিশ্রণ, যেমন, শূন্য বা এক। Hard disk দ্বারা সংরক্ষিত তথ্যের ক্ষুদ্রতম অংশ বিট নামে পরিচিত।


পদার্থের চুম্বকীয়করণের প্রক্রিয়াটি সাধারণত ডিস্কে তথ্য সংরক্ষণ করে কারণ এটির পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। দীর্ঘ সময়ের জন্য পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে সংযুক্ত না থাকলেও ড্রাইভ থাকা ডেটা ধরে রাখা হয় অর্থাৎ ডেটা গুলি মুছে যায় না। আশা করি হার্ডডিস্ক কিভাবে কাজ করে এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।


হার্ডডিস্ক কত প্রকার ও কি কি?

হার্ডডিস্ক কে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

1. SATA HARD DISK : এর পুরো নাম হল Serial Advanced Technology Attachment । SATA ইন্টারফেস কম গতিতে বড় ডেটা ভলিউম পরিচালনা করে। এর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং এর কার্যকরতা অনেক ভালো। বর্তমানে এই হার্ডডিস্কগুলো অনেক কম্পিউটার এবং সার্ভার হার্ডওয়ারে ব্যবহার করা হয়। SATA ইন্টারফেসের Speed 6Gb/sec থেকে 600Mb/sec পর্যন্ত হয়। 


2. PATA HARD DISK : এর পুরো নাম হল Parallel Advanced Technology Attachment। এই pata ড্রাইভ গুলি অনেক আগে ব্যবহার করা হতো এগুলো অনেক পুরনো বর্তমানে এই ধরনের ড্রাইভ আর ব্যবহার করা হয় না। 1986 সালে প্রথম PATA ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়েছিল। PATA ড্রাইভ 133 MB/s স্পীডে পর্যন্ত ডেটা স্থানান্তর হার প্রদান করতে পারে।


3. SCSI HARD DISK : SCSI এর মানে হলো small computer system interface । এই ড্রাইভ গুলি ছোট কম্পিউটার সিস্টেম ইন্টারফেস এ ব্যবহার করা হয় যেমন প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি। এর ট্রান্সফার স্পিড হলো ৭০০MB/s ।


4. SSD Hard Disk :  এটির পুরো নাম হলো সলিড-স্টেট ড্রাইভ (solid state drive) । এই ধরনের হার্ড ড্রাইভ গুলি বর্তমানে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। SSD হলো ডেটা সঞ্চয় করার জন্য নন ভোলাটাইল মেমরি।


হার্ডডিক্স এর বৈশিষ্ট্য 

কম্পিউটারের ডেটা এবং প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করার জন্য অন্যতম মাধ্যম হলো হার্ডডিস্ক।


  • হার্ডডিক্সে ডাটাগুলি খুব নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকে। ডেটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় খুব কম থাকে। 
  • হার্ডডিস্ক হলো নন ভোলাটাইল মেমোরি কম্পিউটার বন্ধ হওয়ার সাথে ডেটা মুছে যাওয়ার কোন ভয় নেই।
  • hard disk এর storage capacity অনেক বেশি হয়।
  • হার্ডডিক্সের কর্ম ক্ষমতা অর্থাৎ স্পিড অনেক বেশি। Harddisk এর rpm স্পিড যত বেশি হবে হার্ডডিক্স এর পারফরমেন্স ভালো হবে ।


হার্ডডিক্স এর সুবিধা : 

হার্ডডিস্ক তুলনামূলকভাবে ছোট এবং বহনযোগ্য।


  • এর কর্মক্ষমতা অনেক বেশি ।

  • এটি দ্রুত কাজ করে। 

  • হার্ডডিস্ক কে সহজে আপগ্রেড করা যায়।

  • বিভিন্ন ধরনের ফটো, ভিডিও, ডকুমেন্ট, অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রাম ইত্যাদি hard disk এ স্টোর করে রাখতে পারবেন।


হার্ডডিক্স এর অসুবিধা : 


হার্ডডিস্ক এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। 

• ডিক্স অর্থাৎ চাকতি গুলি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 • হার্ডডিক্স খারাপ হলে সহজে ঠিক করা যায় না।

• Ram থেকে তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে ডেটা রিড করতে পারে। 


তো বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন hard disk কি | হার্ডডিস্ক এর গঠন | হার্ডডিস্ক এর কাজ কি | হার্ডডিস্ক কিভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে ইত্যাদি বিষয়। 

হার্ডডিক্স কী বা  HDD কি এ বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ।


আরো পড়ুন:

  1. আই ফোন সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত কোনো 
  2. প্রসেসর কি 
  3. বাংলাদেশে dslr ক্যামেরার দাম 
  4. সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?
  5. বিশ্বের সেরা 11টি জনপ্রিয় অনলাইন মোবাইল গেম
  6. নতুন গেমিং ল্যাপটপ 2022
  7. নতুন গেমিং পিসি 2022 |
  8. ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের মধ্যে ভালো ফোন 
  9. কম্পিউটার ভাইরাস কি ? কম্পিউটারে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি ?
  10. 10000-এর নীচে সেরা ফোন 


0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments