শিক্ষায় কম্পিউটারের ভূমিকা | Role of computer in education
প্রযুক্তির মাধ্যমে যখন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে বা শিক্ষাদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তখন তা হয় প্রযুক্তিবিদ্যা মাধ্যমে শিক্ষা। বর্তমানে আমাদের ভারতবর্ষে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য আছে। যে উদ্দেশ্য গুলি পালনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে যে সকল বিষয়গুলো তে সবচেয়ে বেশি উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশ শিক্ষা মনোযোগী হয়ে ওঠা ইত্যাদি। এই কারণে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা আছে। এখানে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার কয়েকটি ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কম্পিউটার কীঃ
কম্পিউটার ইংরেজি শব্দ। কম্পিউটার শব্দটি ইংরেজি থেকে এসেছে যার অর্থ বহন করে গণনা করা।কম্পিউটারকে বলা হয় গণনাকারীর যন্ত্র। এটির মাধ্যমে
অনেক দ্রুত হিসাব-নিকাশ করা যায়।কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ করা,তথ্য পূনরুদ্ধার এবং প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা আছে।কম্পিউটার সুবিধাঃ কম্পিউটারের
অবদান বলে শেষ করা যাবে না। কম্পিউটারের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশি পরিমাণে তথ্য প্রস্তুত করা যায়।এটি মানুষের জীবনে অনেক অনেক সফলতা এনে দিতে পেরেছে। কম্পিউটার আমাদের কাজকে সহজ ও গতী সম্পূর্ণ করে দিয়েছে।
কম্পিউটার কি ? এর ইতিহাস এবং প্রকারভেদ
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার যে সকল ভূমিকা গুলি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -
১) শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের আত্মতৃপ্তি ঘটেছে। আত্মতৃপ্তি একটি শিক্ষার্থীকে আত্ম বিকাশে সহায়তা করে। আর প্রযুক্তিবিদ্যা আত্মতৃপ্তি আনে এটি মানুষের দেহে ও মনে অভিনবত্বের প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম।
২) প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে থাকে। প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের চাহিদা ভিত্তিক বিষয় নির্বাচন করে সে বিষয়ে আত্ম সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
৩) প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের ফলে বা শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ তৈরি হওয়ার পথকে সুগম করে তুলতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যা ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরিনত হতে পারে।
৪) যে কোন বিষয়ে একঘেয়ে পাঠদান শিক্ষার্থীদের কাছে ও তৃপ্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু শিক্ষাদানের মধ্যে যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া করা হয় তবে তা একঘেয়েমি দূর করতে সক্ষম ও খুব সহজে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করে থাকে।
৫) শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার অন্যতম ভূমিকা হল শিক্ষার্থীরা খুব সহজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আত্ম সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আত্মনির্ভরশীল করে তার বলিষ্ঠ জীবন আদর্শ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
৬) বর্তমানে সমাজে সুস্থভাবে বাঁচতে গেলে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান যথেষ্ট প্রয়োজন।এই কারণে বর্তমান দিনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি শিক্ষার একটি যথেষ্ট ভূমিকা আছে। কারণ প্রযুক্তি বিদ্যার শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ পরিণত হতে পারে ও সামাজিক মর্যাদা পেয়ে থাকে।
৭) প্রযুক্তি বিদ্যায় মানব সম্পদের যথার্থ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ নতুন নতুন বিষয় কে আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের মানুষের মনে তৃপ্তি আসে ও মানবসম্পদ অপচয় রোধ হয়।
৮) শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারে।কারণ এই আধুনিক চিন্তাধারা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োগ হলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক হয়ে ওঠে উন্নত জাতি গঠনে সক্ষম হয়ে উঠবে।
কম্পিউটার ভিত্তিক শিক্ষার সুবিধা
(১) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ভিত্তিক শিক্ষাদান : সাধারণ মানসিক ক্ষমতা বিষয়ে একজনের সঙ্গে অন্যজনের পার্থক্য থাকে। তাই সলকে একইসঙ্গে একইভাবে শিক্ষা দিলে শিক্ষার ফল তেমনভাবে প্রকাশিত হয় না। কিন্তু কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষাদান করলে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্ভব হয়।
(২) অনুশীলনের সুযােগ : শ্রেণিকক্ষে সমস্তরকম আলােচনা, পড়ানোর বিষয় বস্তু অনেক সময় মনে থাকে না তখন শিক্ষক, শিক্ষিকা সহজেই সেই বিষয়বস্তু কম্পিউটারের মাধ্যমে পুনরুদ্রেক করতে পারেন এবং অনুশীলনের সুযােগ পান।
(৩) আত্মপ্রত্যয় জাগরণ : কম্পিউটার শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই সমাধান ওদের আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধি করে।
(৪) প্রেষণা সঞ্চার : কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষা ইতিবাচক মানসিকতা গঠনের সহায়ক। এতে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রেষণা সঞ্চার ঘটে ও উৎসাহ বৃদ্ধি পায়।
(৫) সক্রিয়তা বৃদ্ধি : কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের যেমন জ্ঞানের প্রসার ঘটায় তেমনি তারা সমকালীন বিষয় সম্পর্কে সক্রিয় জ্ঞানের অধিকারী হয়।
(৬) সমস্যা সমাধান মূলক শিখন : কম্পিউটারের সাহায্যে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীরা অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। এতে তাদের জ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটে।
কম্পিউটার ভিত্তিক শিক্ষার অসুবিধা
অনুভূতির অভাব : প্রথাগত শিক্ষায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রচিত হয়, পাঠ্য বিষয়ে প্রেষণার সঞ্চার ঘটে। কিন্তু কম্পিউটারের যান্ত্রিকতা সেই অনুভূতির জাগরণ ঘটাতে পারে না।
মানবিক সম্পর্কের ব্যাঘাত : শিখনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষাদাতাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীর মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্ক কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে মানবিক সম্পর্ক হয় না, শুধু যন্ত্রে সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলে।
ব্যয়বহুলতা : ব্যয়বহুল হওয়ায় উপযুক্ত সংখ্যক কম্পিউটার বিদ্যালয়ে নেই।
সংবেদনশীলতার অভাব : সাধারণ শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর প্রয়ােজন অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন কিন্তু কম্পিউটারভিত্তিক শিখনে তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হয় না।
বিষয়বস্তু উপস্থাপনে ব্যাঘাত : কম্পিউটারের ছােটো পরিসরে নির্দিষ্ট পরিমাপের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে বা অন্য কোনাে সমস্যার কারণে বিষয়বস্তু চোখের সামনে ফুটে না উঠলে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা অসুবিধাজনক।
বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব : কম্পিউটারে যা প্রোগ্রাম সেট করা থাকে তাই তারা শেখে। ফলে অনেক সময় বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব দেখা যায়।
স্বাস্থ্যের ক্ষতিঃ
বেশি সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের উপর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহারের
কারণে চোখের পেশিতে চাপ পড়ে ফলে চোখের ক্ষতি হয়।এটি বেশি ব্যবহারের কারণে ঘাড় ও মস্তিষ্কের বড় ধরনের ক্ষতিহবে।এই কম্পিউটার যারা বেশি সময় ধরে বেশি ব্যবহারে তাদের উচিত কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া।
নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশের উপরঃ
কম্পিউটার আবিষ্কার করা কম্পিউটার বর্জ্য পরিবেশকে নানা রকম ভাবে দূষণ করে।কম্পিউটারের নষ্ট পার্টগুলো থেকে
বিষাক্ত উপাদান পরিবেশ ছড়াতে পারে।নষ্ট হয়ে যাওয়া কম্পিউটার আমাদের পরিবেশের উপরে ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
শক্তি ও সময় অপচয়ঃ
অযথা কম্পিউটার ব্যবহার করে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়।শরীর স্বাস্থ্য অব উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
অনেক মানুষ এখন কম্পিউটার বেশি সময় ধরে গেমস, চ্যাট করে সময় ও শক্তি নষ্ট করতেছে।এখন নতুন প্রজন্ম বেশির ভাগ সময় ভার্চুয়াল জগতে কাটায় এবং
ফেচবুক, টুইটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।এটি স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।অপর দিকে এই সনয়গুলো ব্যয় করার ফলে তারা ঠিক মতো পড়ালেখা করে না।আর এটি সামাজিক জীবনের পাশাপাশি প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন