আইফোন এত বিখ্যাত কেন ? Why is the iPhone so famous?

 আইফোন এত বিখ্যাত কেন ?




Table of Contents

আইফোন এর কিছু বিবরণ 

আইফোন কেন এত জনপ্রিয় ? 

হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার

নিরাপত্তা সম্পর্কে জেনে নিন 

বিক্রয়োত্তর সেবা

স্থিতিশীলতা কেমন 

ব্র্যান্ড ভ্যালু



আরো পড়ুন 


                                                 আইফোন এর কিছু বিবরণ 

টেক জায়ান্ট অ্যাপলের তৈরি আইফোন এর জনপ্রিয়তার কথা কে না জানে! অনেকেই ভাবেন আইফোন কেন এত দামি! অ্যাপল আইফোন অত্যন্ত জনপ্রিয়। আইফোন কেন এত জনপ্রিয়? এমনকি আইফোন হচ্ছে অ্যাপল এর সর্বাধিক বিক্রিত প্রোডাক্ট।

প্রতি বছর মাত্র কয়েকটি ফোন বাজারে ছাড়লেও বিক্রির দিক দিয়ে আইফোন এর সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়ে চলছে। ২০১৯ সালে ১৮৭.২ মিলিয়ন ও ২০২০ সালে ১৯৬.৯ মিলিয়ন ইউনিট আইফোন বিক্রি করেছে অ্যাপল।

অ্যাপল যখন প্রথম ২০০৭ সালে আইফোন বাজারে আনে, তখন এর বেস মডেল এর দাম ছিলো ৪৯৯ মার্কিন ডলার। তখনকার হিসেবে মোবাইল ফোনের দাম এতো হওয়ায় অনেকে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই ঠাট্টা করেছেন। তবে স্টিভ জবস এর দূরদর্শীতা যেমন পারসোনাল কম্পিউটারকে যুগোপযোগী করেছে, একই ব্যাপার আইফোনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যণীয়।

২০১০ সালে যেদিন প্রথম আইফোন ফোর লন্স করা হলো সেদিন ভোর ৪ টা থেকে আপেল স্টোরের সামনে লম্বা লাইন। অথচ দোকান খুলবে সকাল ১০টায়। মানুষজন ৬ ঘন্টা আগে থেকে প্রচন্ড শীতের ভেতর দোকানের সামনে এসে দাড়িয়েঁ ছিলো, কখন দোকান খুলবে আর তারা আইফোন কিনতে পারবে। 

মজার ব্যাপার হলো, লাইনে দাড়ানোঁ সবাই কিন্তু সেদিন আইফোন কিনে বাড়ী ফিরতে পারেনি। কারন, লাইন শেষ হবার আগেই দোকানে আইফোনের স্টক শেষ হয়ে গিয়েছিলো। 

এর পরের বছর আপেলের বেশীর ভাগ স্টোরেই আইফোন পাওয়া যায়নি কারন ফ্যাক্টরি থেকে যা বের হয়েছে তার সবই প্রিঅডারে চলে গেছে, কেউ রিটেইল কিনতে পারেনি দোকান থেকে। দোকানে গিয়ে যারা কিনতে চেয়েছে, তাদেরকে আরো ৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। Yes! This is iPhone.

পৃথিবীর আর কোন ফোন বাজারে আসার আগেই শেষ হয়ে যায় নি। গিয়েছিলো একমাত্র আইফোন। পৃথিবীর আর কোন ফোনের জন্য এইভাবে পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষায় থাকেনি যেমনটা থাকে নতুন মডেলের আইফোনের জন্য।






         আইফোন কেন এত জনপ্রিয় ?


আইফোন প্রথম বাজারে আসার সময় থেকেই বাকি স্মার্টফোনগুলোর থেকে দর্শনদারিতে আলাদা অবস্থান গড়েছে। আইফোনের সামনে বাটন মাত্র একটি, যা দিয়ে আপনি ফোনের মেইন মেনুতে ঢুকতে পারবেন। অন্যান্য স্মার্টফোনের ফ্রন্টে বাটনের সংখ্যা একের অধিক, যে কারণে ঝামেলাও বেশি। আইফোনের একটি মাত্র বাটন চেপে আপনি টাচ স্ক্রিনের সব ধরনের ফাংশনে ঢুকতে পারবেন। স্বতন্ত্র এ নকশার কারণেই আইফোন সবার মাঝে এতটা জনপ্রিয়। যে কারণে বাকি ফোন কোম্পানিগুলোও মাঝেমধ্যে তাদের অনুকরণের চেষ্টা করে।
 
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আইফোনের গ্রাফিকস ইন্টারফেস যেকোনো প্রযুক্তিপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করবে। অপারেটিং সিস্টেমও অত্যাধুনিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং ঝামেলাবিহীন। জবস একবার বলেছিলেন, আইফোনের আসল নকশা এর দেখনদারিতে নয়, এটা যেভাবে কাজ করে সেটাই।

আইফোন এর দাম সাধারণত অনেক বেশি থেকেই শুরু হয়। অ্যাপল এর লেটেস্ট মডেল এর আইফোন, আইফোন ১৩ এর সবচেয়ে কম দামি ভ্যারিয়েন্ট, আইফোন ১৩ মিনি এর বেস মডেল দাম পড়ে প্রায় ৭০০ মার্কিন ডলার। এইতো গেলো সবচেয়ে কমদামি লেটেস্ট আইফোন মডেলের কথা। আইফোন এর অন্যান্য মডেলগুলোর দামও ফোন হিসাবে যে কাউকে অবাক করে দিতে বাধ্য।


                      হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার

আইফোন এর হার্ডওয়্যার এর দিকে নজর দিলে এটি খুব সহজেই দৃশ্যমান যে অ্যাপল হার্ডওয়্যার এর ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়না। মোবাইল ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সেরা সব প্রযুক্তি আইফোনগুলোতে জুড়ে দেয় অ্যাপল। অর্থাৎ আইফোন এর হার্ডওয়্যার এর ক্ষেত্রে এক চুল ও ছাড় দিতে রাজি নয় অ্যাপল, তাতে ফোন এর দাম বাড়াতে হলেও।

অ্যাপল এর আইফোনের হার্ডওয়্যার হয়ত অ্যাপল নিজে তৈরি করে নয়তো অন্য ম্যানুফ্যাকচার থেকে অর্ডার করে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে সাপ্লাই করে। আর আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম, আইওএস ও অ্যাপলের ডেভলপ করা।
 
সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, দুইটিই নিজেদের তরফ থেকে আসায় আইফোনের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকে অনন্য ও অসাধারণ। আর এই জিরো কমপ্রোমাইজ যুক্ত হার্ডওয়্যার আর ইউজার-ফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার এর মেলবন্ধনের প্রভাব দেখা যায় আইফোনের দামে।

অ্যাপল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে আইফোনে সেরা ও যুগোপযগী প্রযুক্তির উপস্থিত নিশ্চিত করে। অ্যাপল কখনো তাড়াহুড়োর মধ্যে ফোন রিলিজ করে না। গ্রাহকদের সেরা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স প্রদানের জন্য একটি ফোনের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য অসংখ্যবার পরীক্ষা করা হয়। যে কোম্পানি তাদের ফোনকে নিখুঁত করার পেছনে এতো সময় আর অর্থ ব্যয় করে


                         নিরাপত্তা সম্পর্কে জেনে নিন 

অ্যাপলের কোনো ডিভাইস ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। হ্যাক করতে গেলেও ঘাম ছুটে যাবে। খোদ এফবিআই বেশ কিছুদিন আগে এক সন্দেহভাজনের আইফোনের লক খুলতে পারছিল না দেখে অ্যাপলের দ্বারস্থ হয়। অ্যাপল সেই লক খুলে দিতে অস্বীকৃতিও জানায়।

শুধু নিরাপত্তার কারণেই আইটিউনস ছাড়া খুব কমসংখ্যক ডিভাইসে ডেটা সিঙ্ক করা যায় না। এটা অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক হলেও নিরাপত্তার ব্যাপারটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বলা হয় অ্যাপলের আইওএসকে। সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে বড় হুমকি স্পাইওয়্যারের বিপক্ষে শুধু আইওএস ছাড়া আর কোনো মোবাইল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। অ্যান্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি, সিমবিয়ান কিংবা উইন্ডোজের তুলনায় আইওএস অনেক বেশি নিরাপদ। আইফোন হারিয়ে গেলে ‘ফাইন্ড মাই আইফোন’ সিস্টেম দিয়ে আপনি তা খুঁজে বের করতে পারবেন। যদিও এ অ্যাপের শতভাগ সুবিধা রয়েছে শুধুই উন্নত বিশ্বে। পাশাপাশি টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তিতেও আইফোনেও সমকক্ষ নেই কেউ।



                         বিক্রয়োত্তর সেবা

অ্যাপল এর ব্রিকয়োত্তর সেবার সামনে অন্যসব প্রতিষ্ঠানের সেবা তুচ্ছ মনে হতে পারে। ২০১৫ সালে বের হওয়া আইফোন ৭ এখনো নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট পায়। শুনতে অবাক করা হলেও এটাই সত্য। অনেক বছর ধরে আপডেট পাওয়ায় পুরোন মডেলের ফোনগুলোও নতুন নতুন সব ফিচারের ছোঁয়া পেয়ে নতুনের মতোই কাজ করে।

এছাড়াও আইফোনসহ যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস কেনার বছরের পর বছর হয়ে গেলেও অ্যাপল সার্ভিস সেন্টার থেকে খুব সহজেই বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়। যার ফলে আইফোনে সমস্যা দেখা দিলেও সেই চিন্তার কাজ অ্যাপল সার্ভিস সেন্টারই করে। ব্যবহারকারীর কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র ফোন সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া। আর অ্যাপল সার্ভিস সেন্টারে গ্রাহকদের প্রতি দেখানো আন্তরিকতার কথা সবার মুখে মুখে।

                     স্থিতিশীলতা কেমন 

এবার কথা বলা যাক স্থিতিশীলতা নিয়ে। বর্তমানে আমরা অনেক অ্যান্ড্রয়েডের ফোন দেখতে পাবো যেগুলো অনেক দ্রুত, কিন্তু ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যায়।
আর অন্যদিকে অ্যাপল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একইরকম সার্ভিস দেয়। এর কারণ হচ্ছে অ্যাপলের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট বা ব্যাবস্থাপনা খুবই ভালো।
তার মানে প্রসেসর, রেম , জিপিও এই উপাদানকে আইফোনের সফটওয়্যার খুব সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারে।
আর ঠিক এই করণেই অ্যাপলের মধ্যে কম ধারণক্ষম ব্যাটারি থাকা সত্ত্বেও এটা অনেক ভালো এবং বেশিক্ষণ চালানো যায়।

                  ব্র্যান্ড ভ্যালু

ইতিহাস স্বাক্ষী আছে যে অ্যাপল বেশিরভাগ সময়ই প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির প্রোডাক্ট গ্রাহকদের মধ্যে সরবরাহ করে এসেছে। অ্যাপল এর যেকোনো প্রোডাক্ট এর মান হয়ে থাকে অসাধারণ। যার ফলে একজন ক্রেতার মাথায় এই ধারণাটি অনেকটা গেঁথে থাকে যে, প্রোডাক্ট এর দাম বেশি হলেও অ্যাপল তার গ্রাহককে সেরাটাই প্রদান করছে।



0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments