ক্রেডিট কার্ড হলো মূলত একটি চিপ-ভিত্তিক প্লাস্টিকের কার্ড (সাধারণত) যাতে ক্রেডিট কার্ডধারীর নাম, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, মেয়াদ শেষ এর তারিখ, সিভিভি, ক্রেডিট কার্ডধারীর স্বাক্ষর এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের বিবরণ, ইত্যাদি তথ্য দেওয়া থাকে।
ক্রেডিট কার্ড মূলত কার্ডধারীর অর্থ ব্যয়ের সুবিধা নিশ্চিত করে। ব্যবহারকারী যখন কোনো অর্থ প্রদানের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তখন উক্ত অর্থ সেভিংস/কারেন্ট একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়না। বরং খরচ করা অর্থ ব্যাংক বা কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে বাকিতে লেনদেনের সুবিধা দিয়ে থাকে।
ক্রেডিট কার্ড এর কাজই হচ্ছে ব্যবহারকারীদের বাকিতে লেনদেনের সুবিধা প্রদান করা। প্রতিটি ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে দেওয়া ক্রেডিট লিমিট থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট অংকের লেনদেনের পর আর ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ খরচ করা যায়না। ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করার পর আবার এটি ব্যবহার করা যায়। সাধারণত এক মাসের ক্রেডিট কার্ডের বিল পরের মাসের কোনো এক সময়ে প্রদান করতে হয়।
আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি ।
এক কথায় এটি একটি কার্ড যা ব্যাংক বা এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একজন গ্রাহক নিতে পারে।এর বৈশিষ্ট্য হলো হাতে নগদ টাকা না থাকলেও এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়।তবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত অর্থ ব্যবহার বা খরচ করা বা উত্তোলন করতে পারেন একজন গ্রাহক তার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে।নির্দিষ্ট সময় পর তার ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড কি?
আপনার ব্যাংক থেকে ইস্যু করা সিঙ্গেল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড দেশের মধ্যে কাজ করলেও দেশের বাইরে কাজ করবেনা। এজন্য আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এর প্রয়োজন পড়ে। এগুলো সাধারণত ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড হয়ে থাকে। এতে কারেন্সি হিসেবে বাংলাদেশি টাকা এবং মার্কিন ডলার থাকে। তবে ব্যাংকভেদে আপনি হয়তো ইউরো বা অন্যান্য মুদ্রাও কারেন্সি হিসেবে নিতে পারেন।
আপনি সাধারণ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা কার্ড সেবাদাতা প্রতিনিধিকে জানালেই তারা আন্তর্জাতিক কার্ড এর আবেদন পত্র দিবেন। তবে বিদেশী মুদ্রা যেমন ডলার খরচ করতে চাইলে আগে আপনার পাসপোর্টের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার এন্ডোর্স করাতে হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই গ্রহণযোগ্য। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড আপনার দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে করা খরচের উপায়কে আরো সহজ করে দেয়।
ক্রেডিট কার্ডে কিভাবে ভালো করে তৈরি করবেন ?
১. ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড এক্টিভেট করুন
ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড যাই হোক না কেন, হাতে পাওয়ার পর পরই এটি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়না। কার্ড ইস্যু করার পর এটি সিস্টেমে চালু হতে ১ থেকে ৩ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। কার্ড একটিভ হলে আপনি মোবাইলে এসএমএস কিংবা ইমেইল পেতে পারেন ।
তবে সবচেয়ে ভাল হয়, যদি আপনি ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড সেবাদাতার হেল্প লাইনে ফোন করে এক্টিভেশন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেন। মোট কথা, কার্ডটি শুরুতেই এক্টিভেট করে নিতে হবে।
২. পিন নাম্বার সংগ্রহ করুন
এটিএম বুথ এবং দোকানে POS (পয়েন্ট অব সেল) এর মাধ্যমে কেনাকাটার জন্য ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডের পিন নাম্বার দরকার হবে। এটা সাধারণত চার সংখ্যার হয়ে থাকে। এই পিন নাম্বার গোপনীয়, যা কারো সাথে শেয়ার করা ঠিক নয়।
কার্ডের প্যাকেটের মধ্যে ভাঁজ করা কাগজে পিন নাম্বার প্রিন্ট করা থাকতে পারে। যদি না থাকে, তাহলে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর দেয়া থাকবে যেখানে ফোন করে পিন নাম্বার সংগ্ৰহ করতে হবে।
৩. ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড এর খরচ ও শর্ত জানুন ?
ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ওপর বিভিন্ন শর্ত ও চার্জ প্রযোজ্য হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার কার্ডটি যদি “মাস্টারকার্ড” নেটওয়ার্কের হয়ে থাকে, তাহলে “মাস্টারকার্ড” চিহ্নিত এটিএম বুথ কিংবা POS অথবা ওয়েবসাইটে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। যদি “ভিসা” নেটওয়ার্কের হয়, তাহলে ভিসা চিহ্নিত বুথ/পস ও সাইটে এটি ব্যবহার করা যাবে। তাই এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
এছাড়া প্রতিবার বা প্রতিদিন সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ট্র্যানজেকশন করা যাবে তাও জেনে নিন। ক্রেডিট কার্ডের মাসিক ট্রানজকেশন লিমিট খেয়াল রাখুন। অন্যথায় বিল পরিশোধ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে পারেন।
৪. প্রয়োজনে পাসপোর্ট এন্ডোর্সমেন্ট করিয়ে নিন
আপনি যদি বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া কার্ড দিয়ে দেশের বাইরের কোনো ওয়েবসাইট কিংবা এটিএম বুথ/POS এ লেনদেন করতে চান, তাহলে আপনার পাসপোর্টে এই কার্ডের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এন্ডোর্স করিয়ে নিতে হবে। এটা রাষ্ট্রীয় নিয়ম।
পাসপোর্ট না থাকলে এই এন্ডোর্সমেন্ট ও এ ধরনের লেনদেন আপনি করতে পারবেন না। আপনার পাসপোর্ট নিয়ে ডেবিট/প্রিপেইড কিংবা ক্রেডিট কার্ড সেবাদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানে এই এন্ডোর্সমেন্ট করাতে পারবেন। সাধারণত ১ বছরের জন্য এন্ডোর্সমেন্ট করানো হয়, তবে এটা অটোরিনিউ করারও সুযোগ আছে। সর্বোচ্চ কত ডলার এন্ডোর্স করানো যাবে, তারও একটা সীমা আছে, যা ব্যাংকে গেলেই জানতে পারবেন।
৫. একাউন্টের তথ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করুন
ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার সময় আপনার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেসব তথ্য সরবরাহ করেছেন তার একটি অনুলিপি (কপি) নিজের কাছে নিরাপদে সংরক্ষণ করুন। যদি কোনোদিন কার্ড হারিয়ে যায়, কিংবা অন্য কোনো কারণে কার্ড নতুনভাবে তুলতে হয় (রিপ্লেসমেন্ট) তখন প্রাথমিক তথ্যগুলো আবার দরকার হবে।
৬. ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড অফারগুলো জেনে রাখুন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পে করলে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। এছাড়া অনেক ক্রেডিট কার্ড আছে যেগুলো দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ট্রানজেকশন করলে কার্ডের বার্ষিক ফি মওকুফ হয়ে যায়। এসব অফার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন। কার্ডের হেল্পলাইন এবং সেবাদাতার ওয়েবসাইটে এই তথ্যগুলো পাবেন।
৭. কার্ডের গোপনীয়তা নিশ্চিত করুন
ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড “প্লাস্টিক মানি” নামেও পরিচিত। কারণ, এগুলো দিয়ে আপনার একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন বা লেনদেন করা সম্ভব।
অনলাইন ট্রানজেকশন করার জন্য কার্ডের এটিএম/POS পিন নম্বর দরকার হয়না। কার্ডের গায়ে যেসব তথ্য প্রিন্ট করা থাকে সেগুলোই যথেষ্ট, যেমন- কার্ড নম্বর, মালিকের নাম, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ এবং সিকিউরিটি নম্বর (সিভিসি নম্বর হিসেবেও পরিচিত)। সুতরাং আপনার কার্ড বিশ্বস্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো হাতে দেবেন না।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা---
ক্রেডিট কার্ড এর অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলোঃ
তৎক্ষণাৎ দামি কিছু কেনার ক্ষেত্রে টাকার জন্য কারো দ্বারস্থ হতে হয়না
ডেবিট কার্ড বা চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অধিক নিরাপদ। কারণ পেমেন্ট গেটওয়ে বা মার্চেন্টের সেবায় কোনো অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়লে ক্রেডিট কার্ডে সহজেই রিফান্ড রিকোয়েস্ট করা যায়।
ক্রেডিট কার্ড এর ক্ষেত্রে অনেক কম সুদেই, অনেকসময় শূন্য শতাংশ সুদেও ঝণ পাওয়া যায়
ক্রেডিট কার্ড এ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অফার এর মাধ্যমে ব্যয় থেকেই আয় করা সম্ভব
কার্ড ব্যবহারের ঝণের বোঝা বেশি মনে হলে থাকছে কার্ড এর ধরন পরিবর্তনের সুযোগ
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা ও সময়মত বিল প্রদান করলে ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের ব্যাংক থেকে ঝণ পাওয়ার যোগ্যতার সূচক সংখ্যা বা CIB রেকর্ড বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে অনেক ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্টও পাওয়া যায়
অসুবিধা:
•ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি
•হিডেন বা লুক্কায়িত ব্যয়
•ভুল কার্ডে ঋণের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা
ক্রেডিট কার্ড এর খরচ
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকই বিনামূল্যে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে থাকে। তবে ক্রেডিট কার্ড এর বার্ষিক চার্জ ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে আপনি কিছু চার্জ মওকুফ করাতে পারেন। আপনি ক্রেডিট কার্ড যে ব্যাংক থেকে নিতে চান, সে ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে উক্ত ক্রেডিট কার্ড এর খরচ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন