কিভাবে কাজ করে ইন্টারনেট ? | How does the internet work?

 

ইন্টারনেট  কিভাবে কাজ করে  ?





ইন্টারনেট –  ইন্টারনেট এর ব্যবহার আমাদের জীবনে এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকে অনেকে দম বন্ধ থাকার সাথেও তুলনা করা হয়  । অনেকেই তো ইন্টারনেট ব্যবহার এর অধিকারকে রীতিমতো মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করে থাকে ।

আসুন জেনে নিই দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত এই ইন্টারনেট কাকে বলে, এবং ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট  ইতিহাস, ইন্টারনেট এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে আমরা আরো বিস্তারিত জানবো  ।


ইন্টারনেট কী?

ইন্টারনেট হলো সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিভাইস সমূহের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ত একটি নেটওয়ার্ক। যা সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার ও ডিভাইস নেটওয়ার্কের সমষ্টি হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সকল ধরনের জনসাধারণের জন্য একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।




কীভাবে ইন্টারনেট কাজ করে?


ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী  আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যে  বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার হয় ।


ইন্টারনেট এর ইতিহাস 

পৃথিবী এবং মানবসভ্যতার বয়স হিসাব করলে ইন্টারনেটকে অপেক্ষাকৃত নতুন একটি আবিস্কার হিসাবে গণনা করা হয় । সৌভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকবার নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে মাথা ঘামাবার জন্য। সেই লক্ষ্যের জের ধরে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় এডমিনিস্ট্রেশন অনেকগুলো এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে। -(ARPA) ছিলো এই সদ্য নির্মিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে 
অন্নতম একটি।


আরপা ছিলো মূলত ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট এর কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ক রিসার্চ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের লক্ষ্য ছিলো বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যকার তথ্য আদান প্রদানের সহজ মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা। জে.সি.আর. লিকলাইডার সে সময়ে আরপা এর ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি ছিলেন এই তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে তৈরীর অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা, যা কিছু বছরের ব্যবধানেই সত্যি হতে যাচ্ছিলো।

আরপা ছাড়া বর্তমানের ইন্টারনেট পর্যন্ত আসা কোনোদিনও সম্ভব হতোনা। এই প্রতিষ্ঠানের চেষ্টার ফসল হিসেবে ইন্টারনেট এর প্রথম সংস্করণ “আরপানেট” জন্ম নেয়। আরপানেট তৈরীর কিছুবছর আগেই লিকলাইডার আরপা ছেড়ে গেলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতা আরপানেটের সৃষ্টির পেছনে প্রধান অংশ 

 
১৯৭১ সালে ইউনিভার্সিটি ও সরকারী গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে একই ছাদের নিচে আনার লক্ষ্যে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা ২৩ এ গিয়ে দাঁড়ায়।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে জনসম্মুখে ধীরে ধীরে আরপানেট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, এবং এটিকে কমার্সিয়ালাইজ করতে সুবিধা হয়। মিলিটারি ও রিসার্চ এর লক্ষ্যে তৈরী আরপানেট ১৯৭৪ সালে বেরানেক ও নিউম্যান এর হাতে ধরে “টেলনেট” এর রুপ পায়৷ ১৯৮১ সালে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২১৩ তে এবং প্রতি ২০ দিনে একটি করে নতুন হোস্ট যুক্ত হচ্ছিলো।

১৯৮২ সালে “ইন্টারনেট” শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়৷ ১৯৮৪ সালে ইন্টারনেট হোস্ট সংখ্যা ১০০০, ১৯৮৭ সালে ১০০০০ ও ১৯৯০ সালে ৩০০০০ এর মাইলফলক অতিক্রম করে।


 
১৯৮৮ সালের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো ইন্টারনেট। হ্যাকার এর মত ইন্টারনেট ভিত্তিক শব্দগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে তখন, যখন ১৯৮৮ সালের পহেলা নভেম্বরে “ইন্টারনেট ওয়ার্ম” নামে একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম তখনকার ৬০ হাজার হোস্টের মধ্যে ৬০০০ হোস্ট বিকল করে দেয়।

এভাবেই বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে সৃষ্টির ২৫ বছর সম্পন্ন করে আজকের ইন্টারনেট। বাড়তে থাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা। ধীরে ধীরে আরপানেট রুপ পায় আজকের ইন্টারনেটে।





ইন্টারনেটের সুবিধা এবং  অসুবিধা


ইন্টারনেট নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। কিন্তু অনেকেই এর ক্ষতিকর দিকগুলোকেই বড় করে দেখেন। আমরা ইন্টারনেটের এর সুবিধা ও অসুবিধাসমুহ জানবো।

ইন্টারনেটের সুবিধা

এমন যেকোনো কিছু সম্পর্কে তথ্য ইন্টারনেটে উপস্থিত
ইন্টারনেটে থাকা শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য থাকে হাতের নাগালে
ঘরে বসেই সব রকমের তথ্য নিয়ে গবেষণা সম্ভব ইন্টারনেট ব্যবহার করে ।
ইন্টারনেটে যেকোনো সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় খুব সহজেই
ফ্রি ইমেইল সার্ভিস এর মাধ্যমে খুব সহজেই যোগাযোগ সম্ভব
মেসেজিং, ভিডিও ও অডিও কলিং ফিচারযুক্ত প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন
ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কথা বলা  যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে ।
কোনো বিষয় জানার থাকলে প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্যে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া যায় ।
সকল ধরনের খবর ইন্টারনেটে উপস্থিত
ইন্টারনেট থেকে শিখে দক্ষতা অর্জন করা যায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে।

ইন্টারনেটের অসুবিধা

ইন্টারনেট এর সুবিধার পাশাপাশি বেশকিছু চিন্তনীয় অসুবিধাও বিদ্যমান।
 ইন্টারনেট এর কিছু অসুবিধাসমুহ হলোঃ

যেকেউ যেকোনো কিছু ইন্টারনেটে পোস্ট করতে পারে বলে অগণিত ভূল তথ্যে ইন্টারনেট ভরা ।
ইন্টারনেট আসক্তির ফলে অসংখ্য মানুষ তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে অনিহা প্রকাশ করে ।
ইন্টারনেটে বিদ্যমান পর্ণোগ্রাফির কবলে পড়ে বিপথে যায় তরুণ-সমাজ
ইন্টারনেটে অনেক নকল ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে ধূর্ত লোকেরা টাকা হাতিয়ে নেয় ।
হ্যাকারদের কবলে পড়ে অনেকেই ব্যাক্তিগত তথ্য হারায় ও কম্পিউটার ভাইরাসের কবলে পড়ে ।



0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments