ইন্টারনেট কি ও কিভাবে কাজ করে | What is internet and how it works


ইন্টারনেট – বর্তমানে এই শব্দটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট এর ব্যবহার আমাদের জীবনে এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকে অনেকে দম বন্ধ থাকার সাথেও তুলনা করে। অনেকেই তো ইন্টারনেট ব্যবহার এর অধিকারকে রীতিমতো মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করে।

চলুন জেনে নিই দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত এই ইন্টারনেট কাকে বলে, ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে, ইন্টারনেট ইতিহাস, ইন্টারনেট এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।


ইন্টারনেট কী? - What is the Internet?

ইন্টারনেট হলো মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিভাইস সমূহের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ত একটি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার ও ডিভাইস নেটওয়ার্কের সমষ্টি হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সকল ধরনের জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।


ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে - How the Internet works

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ডাটা প্যাকেট ও মেসেজ আকারে প্রেরিত হয়। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পাঠানো ডেটাকে মেসেজ বলা হয়, যা প্রেরণের আগে ছোট ছোট অংশ বা প্যাকেটে পরিণত হয়।

এই মেসেজ ও প্যাকেটসমুহ এক সোর্স থেকে অন্য সোর্সে আইপি ও টিসিপি ব্যবহার করে ট্রাভেল করে। আইপি হলো মূলত কিছু সিস্টেম এর কিছু নিয়ম যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা প্রেরণের সময় তা মনিটর করে।

ইন্টারনেট এর ইতিহাস - History of the Internet

পৃথিবী কিংবা মানবসভ্যতার বয়স হিসাব করলে ইন্টারনেটকে অপেক্ষাকৃত নতুন একটি আবিস্কার হিসাবে গণনা করা যেতে পারে। সৌভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৫৭ সালে স্পুটনিক-১ স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরণ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকবার নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে মাথা ঘামাবার জন্য। সেই লক্ষ্যের জের ধরে ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় এডমিনিস্ট্রেশন অনেকগুলো এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে। আরপা (ARPA) ছিলো এই সদ্য নির্মিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে একটি।

আরপা ছিলো মূলত ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট এর কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ক রিসার্চ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য ছিলো বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যকার তথ্য আদান প্রদানের সহজ একটি মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা। জে.সি.আর. লিকলাইডার সে সময়ে আরপা এর ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি ছিলেন এই তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে তৈরীর অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা, যা কিছু বছরের ব্যবধানেই সত্যি হতে যাচ্ছিলো।

আরপা ছাড়া বর্তমানের ইন্টারনেট পর্যন্ত আসা কোনোদিনও সম্ভব হতোনা। এই প্রতিষ্ঠানের চেষ্টার ফসল হিসেবে ইন্টারনেট এর প্রথম সংস্করণ “আরপানেট” জন্ম নেয়। আরপানেট তৈরীর কিছুবছর আগেই লিকলাইডার আরপা ছেড়ে গেলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতা আরপানেটের সৃষ্টির পেছনে প্রধান শক্তির অংশ ছিলো।

শুর থেকেই আরপানেট কে সফলতার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছিলো। ১৯৭১ সালে ইউনিভার্সিটি ও সরকারী গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে একই ছাদের নিচে আনার লক্ষ্যে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা ২৩ এ গিয়ে দাঁড়ায়।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে জনসম্মুখে ধীরে ধীরে আরপানেট সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, যাতে এটিকে কমার্সিয়ালাইজ করতে সুবিধা হয়। মিলিটারি ও রিসার্চ এর লক্ষ্যে তৈরী আরপানেট ১৯৭৪ সালে বেরানেক ও নিউম্যান এর হাতে ধরে “টেলনেট” এর রুপ পায়৷ ১৯৮১ সালে আরপানেট এর হোস্ট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২১৩ তে এবং প্রতি ২০ দিনে একটি করে নতুন হোস্ট যুক্ত হচ্ছিলো।

0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments