শেয়ারিং, আলোচনা বা নেটওয়ার্কিং এর জন্য ফেসবুক গ্রুপগুলো আদর্শ স্থান। আপনি হয়ত জেনে খুশি হবেন যে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করা সম্ভব। সত্যি বলতে একাধিক উপায়ে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করতে পারবেন। অফিসিয়াল পদ্ধতিতেই ফেসবুক গ্রপ থেকে ইনকাম করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
পেইড মেম্বারশিপ
ফেসবুক গ্রুপে সম্প্রতি সাবস্ক্রিপশন ফিচার চালু করা হয়েছে। এই ফিচার ব্যবহার করে গ্রুপের মধ্যে আলাদা সাব-গ্রুপ তৈরি করা যাবে, যেখানের কনটেন্ট দেখার জন্য মেম্বাররা অর্থ প্রদান করবে।
ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয়ের এটি একটি সেরা পথ হতে পারে, যদি আপনার গ্রুপটি শিক্ষামূলক গ্রুপ হয়ে থাকে। ধরুনঃ আপনি কোনো স্কিল শিখান, সেক্ষেত্রে আপনার সেই কোর্স বা কনটেন্ট গ্রুপের মেম্বারদের সাথে সাবক্রিপশন এর বিনিময়ে শেয়ার করতে পারেন।
যেসব গ্রুপের কমিনিউটি একটিভ রয়েছে, তাদের জন্য ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয়ের একটি পথ হতে পারে গ্রুপ সাবস্ক্রিপশন। ফেসবুক গ্রুপে সাবস্ক্রিপশন ফিচার চালুর জন্য আপনাকে অবশ্যই উক্ত গ্রুপের এডমিন হতে হবে।
পণ্য বিক্রি করে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয়
ফেসবুকে অসংখ্য “বাই এন্ড সেল” গ্রুপ রয়েছে, এসব গ্রুপে বাচ্চাদের কাপড় থেকে শুরু করে সেকেন্ড হ্যান্ড কার পর্যন্ত সবকিছু পাওয়া যায়। কম দামে ভালো প্রোডাক্ট কেনার জন্য এসব গ্রুপ একটি অসাধারণ বিকল্প মাধ্যম হতে পারে। তথ্য হোক বা সেরা অফার খোঁজা, একই ধরনের প্রয়োজনে ফেসবুক গ্রুপ বেশ কাজে আসতে পারে।
স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে কোনো পণ্য আদান-প্রদান করে সুসম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব গ্রুপ বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও ব্যবসার ক্ষেত্রে কাস্টমারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হোক কিংবা নতুন কাস্টমার পাওয়া হোক, উভয় ক্ষেত্রে ফেসবুক গ্রপ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এসব “বাই এন্ড সেল” গ্রুপে নিজের পণ্য বিক্রির পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের জন্য অন্যদের কাছ থেকেও অর্থ চার্জ করা সম্ভব। এর ফলে গ্রুপটি অনেকটা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মত কাজ করে, যেখানে একাধিক প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম সম্পাদনা করে।
সার্চ এর মাধ্যমে নিজের প্রয়োজনের গ্রুপ খুঁজে বের করা যায়। এরপর সেখানে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। তবে ফেসবুক গ্রপ থেকে আয়ের জন্য নিজের গ্রুপ তৈরি করা সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত।
ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস দিয়ে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয়
বেচাকেনার গ্রুপে যেমন বিভিন্ন পণ্য বিক্রি বা খোঁজা যায়, ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সার, চাকরিপ্রার্থী, কনসালটেন্ট, ইত্যাদির জন্য ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। যারা দক্ষ তারা এসব গ্রুপে নিজের সার্ভিস অফার করেন, এবং যাদের সেবা দরকার তারা তা কিনে নেন।
ফ্রিল্যান্সারগণ বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ থেকে একাধিক উপায়ে কাজ পেতে পারেন। প্রথমত, বিভিন্ন গ্রুপ যারা ফ্রিল্যান্সার কর্মী খুঁজছেন তারা পোস্ট করে থাকেন। এভাবে নিজের দক্ষতার সাথে মিল থাকা কাজের সুবিধা সহজে লুফে নেওয়া যায়। যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন গ্রুপে আপনার কাজ তুলে ধরলে কোনো প্রতিষ্ঠানের তা পছন্দ হলে তারা আপনাকে হায়ার করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতে পারে।
আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে তা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন এসব গ্রুপের সাহায্যে। ওয়েব ডিজাইন, এসইও, রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ যেকোনো বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রদান সম্ভব। এছাড়াও আপনি চাইলে নিজের সার্ভিস দেওয়ার জন্য ফেসবুক গ্রুপ খুলতে পারন, যেখানে একই সেক্টরের মানুষজন অভিজ্ঞতা, সুযোগ, ইত্যাদি আদানপ্রদান করতে পারে।
আবার আপনি যদি কাজের জন্য লোক খোঁজেন, সেক্ষেত্রে আপনার চাকরির অফার শেয়ার করে সিভি সংগ্রহ করে আগ্রহী ক্যান্ডিডেট থেকে আপনার পছন্দের ক্যান্ডিডেট বেছে নিতে পারেন। এভাবে খুব সহজে কাজের জন্য দক্ষ জনশক্তি খোঁজা বা কাজ পাওয়া সম্ভব।
ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুক পেজের আয় বৃদ্ধি
আপনি যদি ইতোমধ্যেই ফেসবুক পেজ থেকে আয় করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সুখবর আছে। পেজের আয়ের পথ কিন্তু ফেসবুক গ্রুপে শেয়ারের মাধ্যমে সুগম করা সম্ভব। প্রথমত আপনার ফেসবুক পেজ যদি মনেটাইজ হয়, সেক্ষেত্রে পেজের ভিডিও গ্রুপ শেয়ার করে এড এর মাধ্যমে আয় সম্ভব। ফেসবুক পেজের চেয়ে গ্রুপে বেশি রিচ পাওয়া সম্ভব। তাই আপনার পেজ থাকলেও একটি গ্রুপ খুলে কমিউনিটি তৈরি করতে পারেন।
অর্থাৎ ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় এর ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজ ব্যবহার করাও সম্ভব। ফেসবুক পেজে আয়ের যেসব উপায় আছে, সেগুলোর আয় বাড়ানোর উপায় হতে পারে ফেসবুক গ্রুপ। পেজের কনটেন্ট মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হতে পারে ফেসবুক গ্রুপ।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ফেসবুক গ্রুপ হতে আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ফেসবুক গ্রুপগুলো ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদানের অন্যতম উৎস। খুব সাধারণভাবে অন্যদের জিজ্ঞাসার সমাধান দিয়ে অ্যাফিলিয়েট লিংক প্রদান করে ফেসবুক গ্রপ থেকে আয় করা সম্ভব।
সোশ্যাল মিডিয়া প্রোমোশন
আপনার যদি ওয়েবসাইট, ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেল থাকে সেক্ষেত্রে এসব কনটেন্টে ভিজিটর নিতে ফেসবুক গ্রুপ বেশ কার্যকরী একটি মাধ্যম হতে পারে।
ফেসবুক গ্রুপের পোস্ট বা কমেন্টে লিংক শেয়ার করা বেশ সহজ। এছাড়াও শুধু লিংক পোস্ট না করে, লিংক সম্পর্কিত কিছু কনটেক্সট প্রদান করে মানুষকে আপনার লিংকে ক্লিক করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে পারেন।
আপনার শেয়ার করা বিষয় গ্রুপ মেম্বারদের পছন্দ হলে তারাও তাদের প্রোফাইল, গ্রুপ বা পেজে আপনার লিংক শেয়ার করতে পারে। এভাবে খুব স্বাভাবিক উপায়ে আপনার ব্লগ, ওয়েবসাইট বা ভিডিওতে ফেসবুক গ্রুপ থেকে ট্রাফিক আনতে পারবেন।
অন্যদের সাহায্য করা
অন্যদের ইউটিউব চ্যানেল বা ওয়েবসাইটের লিংক আপনার ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার এর জন্য অর্থ চার্জ করত পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনার গ্রুপে শেয়ার করা লিংক থেকে ক্লিক আসার মতো উপযোগী ভাবে গ্রুপ পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গ্রুপ পরিচালনা করাই শ্রেয়।
গ্রুপ ম্যানেজ করা
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে। ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি ফেসবুক গ্রুপ ম্যানেজ করতে ও সকল গ্রুপ টুল ব্যবহারে সক্ষম হন, তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক গ্রুপ ম্যানেজ করেও আয় করতে পারেন।
মূলত যে প্রতিষ্ঠানের গ্রুপের জন্য কাজ করবেন, সেখানে করা পোস্ট, কমেন্ট, মেম্বার, ইত্যাদি মডারেশনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়াও অনেকেই ফেসবুক গ্রুপ মার্কেটিংয়ের জন্য লোক হায়ার করেন। এক্ষেত্রে দক্ষতা থাকলে আপনিও ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করতে পারবেন।
স্পন্সর ও বিজ্ঞাপন দিয়ে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয়
আপনার ফেসবুক গ্রুপ যদি খুবই একটিভ হয় ও গ্রুপে মেম্বারদের আনাগোনা নিয়মিত হয়, তাহলে ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যেতে পারেন স্পন্সর। এছাড়াও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা একটিভ গ্রুপসমুহে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য অর্থ প্রদান করেন।
একাধিক উপায়ে স্পন্সর বা এডভার্টাইজিং কাজ করে। যেমনঃ সরাসরি পোস্ট, গ্রুপের কভার, কিংবা পোস্টের কমেন্টেও সম্ভব কৌশলে বিজ্ঞাপন দেখানো। যেমনঃ আপনি পরামর্শ হিসেবে স্পন্সরের প্রোডাক্ট এর কথা গ্রুপ মেম্বারদের জানাতে পারেন। এভাবে একাধিক উপায়ে স্পন্সর ও বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করা যায়।
আবার ফেসবুক গ্রুপে “ব্র্যান্ড কোলাবরেশন” নামে একটি ফিচার আছে যেটির মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কর্পোরেট ডিল হিসেবে গ্রুপে পোস্ট করতে পারবেন। এখান থেকেও আয় করা যাবে।
ফেসবুক গ্রুপ কি বিক্রি করা যায়?
একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে সেটিকে বড় করে একটিভ রাখার কাজ কিন্তু তেমন সহজ কোনো কাজ নয়। এইজন্য অনেকে ফেসবুক গ্রুপ নতুন করে তৈরি না করে ইতিমধ্যে একটিভ থাকা কোনো গ্রুপ কিনতে চান। আপনি যদি একটি একটিভ ফেসবুক গ্রুপের এডমিন হয়ে থাকেন, তবে উল্লিখিত কোনো উপায়ে গ্রুপ থেকে আয় করতে না পারলে গ্রুপটি বিক্রি করার কথা চিন্তা করা ঠিক হবেনা। কারণ ফেসবুকে কোনো গ্রুপকে বিক্রি বা ক্রয় করা নিষিদ্ধ। ফেসবুক নিজেই জানিয়েছে যে তারা কোনো গ্রুপ বিক্রি বা ক্রয় করাকে সমর্থন করেনা। যদি আপনি কোনো ফেসবুক গ্রুপ বিক্রি করেন বা কেনেন তাহলে আপনার ফেসবুক একাউন্টের সমস্যা হতে পারে।
আপনি কি ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করেন? বা কখনো ফেসবুক গ্রুপ থেকে আয় করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ কমেন্টে জানান!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন