পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম | Rules for opening a Payoneer account

আন্তর্জাতিকভাবে মানি ট্রান্সফার বা উইথড্র এর কথা বললে পেপাল এর পর “পেওনিয়ার” এর নামও আসবে। বাংলাদেশ থেকেও অনলাইনে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা যাবে বেশ সহজে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে থাকলে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে তেমন একটা সময় লাগেনা। এই পোস্টে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


পেওনিয়ার কি

পেওনিয়ার হলো একটি নিউইয়র্ক ভিত্তিক ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি যা দ্রুত অনলাইন মানি ট্রান্সফার ও ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে ব্লগার ও ফ্রিল্যান্সারগণ এই সেবা ব্যবহার করে থাকেন।


পেওনিয়ারকে বর্তমানে পেপাল এর সেরা বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে পেপাল এর অফিসিয়াল সেবা না থাকার কারণে এখানে পেওনিয়ার এর জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেশি।

এছাড়াও পেওনিয়ার একাউন্ট থাকলে বিনামূল্যে মাস্টারকার্ড নেওয়া যায়। এই পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে সাপোর্টেড এটিএম মেশিন থেকে টাকা তোলা য্য। আবার বিভিন্ন মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি যেমনঃ গুগল, অ্যামাজন, এয়ারবিএনবি ও ফাইভার, পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেওনিয়ার ব্যবহার করে থাকে।


পেওনিয়ার এর সুবিধা

পেওনিয়ার এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলোঃ

  • পেমেন্ট রিসিভ করার সবচেয়ে দ্রুততম মাধ্যম
  • ২০০টির অধিক দেশের ১৫০টি লোকাল কারেন্সি সাপোর্ট
  • ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সরাসির টাকা উইথড্র
  • পেওনিয়ার টু পেওনিয়ার ট্রানজেকশনে কোনো বাড়তি চার্জ নেই
  • ই-চেক এর মাধ্যমে পেমেন্ট এর ব্যবস্থা
  • সহজে মানি ট্রান্সফার করতে মোবাইল অ্যাপ সেবা রয়েছে
  • পেওনিয়ার একাউন্টের মধ্যে ফ্রি গ্লোবাল পেমেন্টস
  • ফাইভার, আপওয়ার্ক, এনভাটো, ইত্যাদি ওয়েবসাইটের পেমেন্ট নেওয়া যায়
  • বিস্তৃত কাস্টমার সাপোর্ট 

সম্প্রতি পার্টনারশিপে আবদ্ধ হয়েছে বিকাশ ও পেওনিয়ার। যার ফলে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনা যাবে। আরো জানতে চাইলে নিচের লিংক করা “পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম” পোস্টটি ঘুরে আসতে পারেন।

পেওনিয়ার এর সীমাবদ্ধতা

পেওনিয়ার যদিও বাংলাদেশে পেপালের বিকল্প হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ করে, কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। চলুন পেওনিয়ারের কিছু সীমাবদ্ধতা জেনে নিই।


পেওনিয়ার থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার ক্ষেত্রে কনভার্সন রেট তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। এছাড়া নির্দিষ্ট একটা হারে চার্জ কেটে রাখে পেওনিয়ার যা প্রতিযোগী কোম্পানির (যেমন ওয়াইজ) তুলনায় অনেক বেশি।

আপনার নিজের পেওনিয়ার একাউন্টে আপনি নিজের ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যক্তিগত আর্থিক একাউন্ট থেকে টাকা লোড করতে পারবেন না। শুধুমাত্র ক্লায়েন্ট বা ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস থেকে অর্থ আনতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার ওয়াইজ একাউন্ট থেকে আপনার পেওনিয়ার ভার্চুয়াল ব্যাংক একাউন্টে ডলার পাঠাতে পারবেন না। এরকম করতে গেলে আপনার পেওনিয়ার একাউন্টে সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

এখন আমরা জানবো পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হওয়ার কারণে সেকশনে আকারে একাউন্ট খোলার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।


প্রথমত জেনে নিন পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে কি কি তথ্য প্রদান করতে হয়। পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে ব্যক্তিগত তথ্য, সিকিউরিটি ডিটেইলস, পেমেন্ট মেথড, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে হয়। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া একাউন্ট খুলতে অবশ্যই ১৮বছর বয়স হতে হবে। ভেরিফিকেশনের জন্য ফোন নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস প্রদান করতে হয়।

এবার আমরা পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পেওনিয়ার ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন পেজে প্রবেশ করুন। এখানে ক্লিক করে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার পেজে প্রবেশ করতে পারবেন।



এরপর আপনি কি পেশায় আছেন তা জানতে চাওয়া হবে। ফ্রিল্যান্সার, এজেন্সি, সার্ভিস প্রোভাইডার, ইত্যাদি অপশন প্রদান করা হবে। প্রদর্শিত কোনো পেশা আপনার সাথে না মিললে সেক্ষেত্রে “ব্যক্তি” সিলেক্ট করেও পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা যাবে।


এরপর কি কাজে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে চান, তা জানতে চাওয়া হবে। “I’m looking to get paid by international clients or freelance marketplaces” ও “Pay my service providers and suppliers” অপশন থেকে যেটি আপনার দরকারের সাথে মিলে সেটি সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার মাসিক আয়ের পরিমাণ সিলেক্ট করুন ও “Register” অপশনে ক্লিক করুন।



এরপর আপনি Individual নাকি Company হিসেবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে চান তা জানতে চাওয়া হবে। প্রদর্শিত অপশন থেকে আপনার যথাযথ অপশন সিলেক্ট করুন। উল্লেখ্য যে আপনি যদি Company সিলেক্ট করেন তাহলে কোম্পানির বিভিন্ন অফিসিয়াল তথ্য দিতে হবে।


এরপর আসবে ব্যক্তিগত তথ্য পূরণের পালা। সরকার কতৃক ইস্যুকৃত কোনো আইডি, যেমনঃ এনআইডি বা পাসপোর্ট এর সাথে মিল রেখে নাম, জন্মতারিখ, ইমেইল এড্রেস, ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন। এরপর পরবর্তী স্ক্রিনে আপনার দেশ, ঠিকানা, শহর, পোস্টাল কোড প্রদান করতে বলা হবে।



এরপর আসবে মোবাইল ভেরিফিকেশনের পালা। বর্তমানে সচল আছে আপনার এমন একটি ফোন নাম্বার প্রদান করুন। উল্লেখ্য যে এই নাম্বারটি পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা কোনো তথ্য আপডেট করতে কাজে আসবে। ফোন নাম্বার প্রদানের পর ফোনে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে যা এসএমএস আসার ৩০সেকেন্ডের মধ্যে প্রদান করতে হবে। ওটিপি কোড প্রদান করে Next অপশনে ক্লিক করুন। 


পরের পেজে সিকিউরিটি ডিটেইলস পূরণ করতে হবে। প্রথমে পেওনিয়ার একাউন্টে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। এরপর আপনার আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট হিসেবে ন্যাশনাল আইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভার লাইসেন্স প্রদান করুন। আপনার স্থানীয় নাম, অর্থাৎ বাংলা ভাষায় নাম প্রদান করুন। ক্যাপচা পূরণ করে Next এ ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্টে থাকা অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে হলে অবশ্যই ব্যাংক ডিটেইলস প্রদান করতে হবে। আপনার ব্যাংক একাউন্টের ধরন, ব্যাংকের নাম, একাউন্টের নাম ও ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার প্রদান করুন। এরপর শর্তসমূহে সম্মতি প্রকাশ করতে Agree ও এরপর Submit বাটনে ক্লিক করুন।

সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার রিকোয়েস্ট গৃহীত হবে। এরপর একাউন্ট রিভিউয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরবর্তী তিন বিজনেস ডে এর মধ্যে ইমেইলের মাধ্যমে একাউন্ট রিভিউ এর কনফার্মেশন পেয়ে যাবেন। একাউন্ট কনফার্মেশনের ইমেইল পাওয়ার পর পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।

একাউন্ট এপ্রুভাল হওয়ার পর পেওনিয়ার একাউন্ট আপ টু ডেট রাখতে সঠিক ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। পেওনিয়ার একাউন্টে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড প্রদান করে লগিন করুন। এরপর Settings থেকে Verification Center অপশনে প্রবেশ করুন। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সম্পর্কিত নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। যে ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে তা আপলোড করে Submit এ ক্লিক করুন।

আপনার প্রদত্ত সকল ডকুমেন্ট সফলভাবে গ্রহণ করা হলে কয়েকদিনের মধ্যে  ‘Your Payoneer account is successfully approved.’ লেখাযুক্ত একটি ইমেইল পেয়ে যাবেন। এভাবে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে খুব সহজে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।


আপনি যদি বাইরের দেশ থেকে টাকা আনতে চান, সেক্ষেত্রে পেওনিয়ার একাউন্ট বেশ কাজে আসতে পারে। এই অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেশ দ্রুত বিদেশী অর্থ তোলা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ই-কমার্স ওয়েবসাইটে শপিং করতে পেওনিয়ার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আপনার যদি পেওনিয়ার একাউন্ট ব্যবহার করে কোনো কাজ না থাকে, তবে পেওনিয়ার একাউন্ট না খোলার পরামর্শ থাকবে।

0/পোস্ট এ কমেন্ট/Comments